যারা সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা একটি স্মারক সই করলাম। তার মাধ্যমে সিলেট বিভাগের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এসব বিষয় নিয়ে যারা সমালোচনা করে তারা কী এনেছিলেন? তারা তো সবকিছু ভুলে যান।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজের বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুশিয়ারার পানি বণ্টনে সমঝোতা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। কতটুকু পানি আসল সেটা নিয়ে তাদের এই সমালোচনা। আমরা যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলাম, এর ফলে পুরো সিলেট বিভাগ বিশেষ করে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ উপজেলার ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। সেচ প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এতগুলো জমি চাষের আওতায় এসে ফসল দেবে, সেই ফসল আমাদের দেশের মানুষেরই কাজে লাগবে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে যখন ভারত সফরে গেল তখন তারা আপ্যায়ন ভালোই করেছিলেন। কিন্তু পরে এসে উনি বললেন, গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। পানিতে বাংলাদেশের যে অধিকার, সেটা বলতে তারা ভুলে গিয়েছিলেন। যারা দেশের স্বার্থের কথা ভুলে যায় তারা আবার সমালোচনা করেন কোন মুখে?

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা ‘হট টক’ করে তাদের প্রশ্ন করতে পারেন না?  বলতে পারেন না আপনারা তো ভুলেই গেছিলেন। ঠিক এভাবে প্রত্যেকটা বিষয়ে তারা ভুলেই যান।

সেভেন সিস্টার সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের আম পাঠালাম, তারাও আনারসসহ নানা কিছু পাঠাল। তাদের সঙ্গে আমাদের সব সময় যোগাযোগ আছে। তারা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে তো আমাদের যোগাযোগ থাকবেই। তাদের সঙ্গে পণ্য বিনিময় থেকে শুরু করে বর্ডার হাট করেছি। সেখানে আমাদের স্থানীয়রাও লাভবান হচ্ছেন। আমরা পণ্য বিনিময় করতে পারছি, কিনতে পারছি। এছাড়া স্থল বন্দর, নৌ-বন্দর বা রেল যোগাযোগ আমারা চালু করতে যাচ্ছি। শুল্কের বিষয়ও আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। অবকাঠামো উন্নয়ন আমাদের করতে হবে, সেটাও আমরা করে যাচ্ছি। রাস্তা ঘাটের উন্নয়নও আমরা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের মুসলিম ধর্মীয় উৎসব, হিন্দু পূজা-পার্বণে ভারতের অনেকে এসে যোগ দেয়। এই আদান-প্রদান আমাদের মধ্যে আছে। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করি। সবসময় বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এটা আমরা মেনে চলি। কিন্তু তারপরও আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, যারা সবকিছু বাঁকা চোখে দেখে। আবার সেখানেও (ভারতে) আছে। কিছু ধর্মান্ধ তো থাকবেই। তাদের বক্তব্য, কথায় অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। এটা রুখতে আমাদের সে অর্থে কিছু করার নেই। তবে, এদেশে মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটানো হয়। যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিই। সম্প্রীতি যাতে বজায় থাকে, সে চেষ্টা করি।

গত ৫ সেপ্টেম্বর চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও একান্ত বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। স্মারক সই শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেন। সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন।

এএসএস/এমএআর/