মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ চুক্তি ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোনো দুর্বলতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে এর সঙ্গে জড়িত অন্য কর্মকর্তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম। তাদের বিরুদ্ধে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আজ তারা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়। গতকাল (সোমবার) তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদক সচিব বলেন, জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। স্থায়ী কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এখানে লিজ চুক্তির ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোনো দুর্বলতা আছে কি না এগুলোর অনুসন্ধান চলছে। প্রয়োজনে এর সঙ্গে জড়িত অন্য কর্মকর্তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি টিম। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন— বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাইফুল হক শাহ, এয়ার কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ার, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ।

আরও পড়ুন : উড়োজাহাজ লিজ দুর্নীতি : বিমানের ৩ ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ

এর আগে সোমবার চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিশর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এতসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১১শ কোটি টাকা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ওই টিম গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠায়।

মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে গত ১ জুন অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক। দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ওই অভিযান চালানো হয়। মাঝে বদলি জনিত কারণে দুদক টিম পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমানে উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

গত ২৪ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিশরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জন্য কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে দুটি মিশরীয় এয়ারক্রাফট লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সংসদীয় সাব-কমিটির প্রতিবেদন, বিশেষ করে চুক্তিপত্র প্রণয়ন এবং যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ টিমের কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ থাকায় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ এসব বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ ও তানভীর ইমাম অংশ নেন। এরপরই তা দুদকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।

আরএম/এসএসএইচ