২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনীতির মাঠে এরই মধ্যে এ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নানা কৌশলে মাঠ গরম করছে। নির্বাচনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রশাসনেও লেগেছে ভোটের ঢেউ।   

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুরোনো ধারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে অতীতেও এমন হয়েছে, এবারও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের পদগুলোতে কারা বসছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরের ডিসেম্বরেই। গুরুত্বপূর্ণ এ পদগুলোতে কারা আসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, জনপ্রশাসন সচিবের পদ নিয়েও রয়েছে আলোচনা।  

আরও পড়ুন : আইজিপি হচ্ছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

মন্ত্রিপরিষদ সচিব
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবালয়ের শীর্ষ নীতি-ব্যবস্থাপনা বিভাগ, যা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে কাজ করে। আর মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিভাগের আনুষ্ঠানিক প্রধান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনপ্রশাসনের শীর্ষতম পদও। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। এরপর এ পদে কে আসছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর ‘গুড বুকে’ আছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিয়ে আসছেন তিনি। এছাড়া তিনি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত। সেজন্য এ পদে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন খন্দকার আনোয়ারুল।

অবশ্য এ পদের জন্য অন্য কয়েকজনের নামও আলোচনায় আছে। এর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আলী আজমও চুক্তিতে এ পদে আসতে পারেন।  

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন আহমদ কায়কাউস। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ পদে কে আসছেন, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জিয়াউল আহসানের নামও আলোচনায় আছে এ পদের জন্য। 

বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক
বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পদটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদমর্যাদার। বর্তমানে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন শফিউল আলম। আগামী অক্টোবরে তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ পদে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের নাম আলোচনায় আছে। তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এছাড়া এ পদের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে। তাকে চুক্তিতে এ পদে নিয়োগ দিতে পারে সরকার।

জনপ্রশাসন সচিব
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন আলী আজম। আগামী ২ নভেম্বর তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে এ পদে কে আসছেন, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ধর্মসচিব কাজী এনামুল হাসান এবং ভূমিসচিব মোস্তাফিজুর রহমানের নাম আলোচনায় আছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদায়ন, বদলি প্রশাসনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আলোচনা থাকলেও এসব পদে কারা আসছেন, তা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। কারণ এসব নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে তার এখতিয়ার। তাই প্রধানমন্ত্রী এসব পদে পদায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন। 

আরও পড়ুন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যা যা করবে আউয়াল কমিশন

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব পদে সৎ, নিরপেক্ষ এবং যাদের দক্ষতা আছে তাদেরই নিয়োগ দেওয়া উচিৎ। 

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে অসন্তোষ
মুখ্য সচিব, জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব মর্যাদার ৮৫ কর্মকর্তা রয়েছেন। এদের মধ্যে মোট ১২ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মানে একজন কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা। কারণ, কাউকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে আরেকজন কর্মকর্তা সচিব হওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এজন্য এটি একেবারে বন্ধ করা না গেলেও বেশি প্রয়োজন না হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিপক্ষে তারা। 

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবসরের সময় এলে অবসর নেওয়া স্বাভাবিক বিষয়। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টি প্রচলিত আছে। সরকার যদি কারো সার্ভিসকে অপরিহার্য মনে করে, এটা করতে পারে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তবে ঢালাওভাবে না দিলেই হলো। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোনো ব্যক্তি যে অপরিহার্য সেটা কে নির্ধারণ করবে। এটা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ করবে। সচিবদের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী করবেন৷ 

এসএইচআর/এনএফ