আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চালু হয়েছিল শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। চালুর পর বছর তিনেক যেতেই এ প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব কটি টয়লেটই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে অবস্থিত ১৫ তলা এই ইনস্টিটিউটে প্রত্যেক তলায় নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে পৃথক টয়লেট। তবে সেসব টয়লেট কোনোভাবেই আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।  

বেশিরভাগ টয়লেটের কমোডের ফ্ল্যাশ, বেসিনের কল নষ্ট। জরুরি বিভাগে একাধিক টয়লেট থাকলেও সেগুলো বন্ধ। কোনো কোনো কমোডে আবার সিট, সিট কভার কিছুই নেই।    

এই ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন একজন রোগীর স্বজন বলেন, এখানে চিকিৎসা সেবা ভালো, তবে টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেটের ফ্ল্যাশ, কল, বেসিন সবই প্রায় নষ্ট। সরকার এত টাকা খরচ করে এগুলো লাগালেও এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

জরুরি বিভাগে টয়লেটের অবস্থা আরও খারাপ। ইনস্টিটিউটে রোগী নিয়ে আসা মো. আল আমিন নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জরুরি বিভাগের টয়লেট একেবারেই ব্যবহার করা যায় না। এত দুর্গন্ধ, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আপনি নিজেই গিয়ে দেখেন অবস্থা কী? জরুরি বিভাগে একাধিক টয়লেট থাকলেও সেগুলো বন্ধ রয়েছে। এখানে প্রত্যেক তলাতেই অনেক টয়লেট থাকার পরও বেশিরভাগ টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। অন্যগুলো তালা দেওয়া।  

আরও পড়ুন : ফের কার্যক্রম চালাচ্ছে ‘অবৈধ’ ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ছোট চাকরি করি, এসব তো আমরা বলতে পারি না। টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা বা কোথায় কী সমস্যা এগুলো দেখা ওয়ার্ড মাস্টারের কাজ। 

তিনি আরও বলেন, আশপাশের মাদকসেবীরা টয়লেটে ঢুকে কল, পুশ শাওয়ার এগুলা খুলে নিয়ে যায়। রোগীর লোক সেজে ঢুকে এই কাজ করে তারা। মাঝে-মধ্যে পরিষ্কার করা হয় কিন্তু সে অবস্থা বেশি সময় থাকে না।  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড মাস্টার জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনি টয়লেটের বিষয়ে যে অভিযোগটা করেছেন তা অনেকটাই সত্য। আমরা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। মাদকসেবীরা রোগীর লোক সেজে হাসপাতালে ঢুকে কল, পুশ শাওয়ার ও কমোডের সিট খুলে নিয়ে যায়। তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি রোগীদের ব্যবহার উপযোগী করে রাখার জন্য। 

জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডাক্তার এস এম আইউব হোসেন বলেন, জরুরি বিভাগের টয়লেটই সবচেয়ে বেশি মানুষ ব্যবহার করে। মাদকসেবী ও বিভিন্ন লোকজন টয়লেট ব্যবহার করে নোংরা করে রাখে। জরুরি বিভাগের টয়লেট সবচেয়ে বেশি অপরিষ্কার থাকে। তবে ওপরের টয়লেটগুলো ব্যবহারের উপযোগী। এখানকার ওয়ার্ড মাস্টারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে তারা যেন টয়লেটগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, যেন ব্যবহারের উপযোগী হয়। তারপরও অনেক কিছুই চোখ এড়িয়ে যায়।  

আরও পড়ুন : রোগী মারা যাওয়া পর্যন্ত কমিশন ঢোকে তাদের পকেটে

তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ডের বাইরের টয়লেটগুলোতে একটু সমস্যা। ভেতরের টয়লেটগুলো শুধু রোগীরা ব্যবহার করায় সেগুলোর অবস্থা ভালো আছে। এত বড় হাসপাতালে সবকিছু তো দেখে রাখা সম্ভব হয় না। এই কাজগুলো মূলত দেখার দায়িত্ব ওয়ার্ড মাস্টারদের।  

এসএএ/এনএফ