লক্ষ্মীপুরের চন্দগঞ্জ থানা থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর (রোববার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় লিভারের সংক্রমণে ভোগা ১৯ বছর বয়সী ফয়সাল হোসেনকে। পরে ভর্তি হন মেডিসিন বিভাগের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে চিকিৎসক তাকে হাই অ্যান্টিবায়োটিক মেরোপেনেম ইনজেকশন লিখে দেন।

চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন তাকে একটি করে ইনজেকশন দেওয়ার কথা। সরকারিভাবে এই ইনজেকশন বরাদ্দ রয়েছে। তবু এক হাজার টাকা করে দুটি ইনজেকশন রোগীর স্বজনের কাছে ২০০০ টাকায় বিক্রি করেন ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের ডিউটিরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিপ্রজিত মন্ডল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এ বিষয়ে লিখিতভাবে ভুল স্বীকার করেন বিপ্রজিত মন্ডল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোগী ফয়সাল হোসেনের ভাবী পলি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দেবর ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। বর্তমানে ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের এক্স-২০ নম্বর বেডে তার চিকিৎসা চলছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসক একটি হাই অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন। পরে এখানে ডিউটিরত নার্স বিপ্রজিত মন্ডল জানান, এক হাজার টাকা করে দিলে সে এই ইনজেকশন ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। পরে আমরা তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে দুটি ইনজেকশন দুই হাজার টাকায় কিনে নিই। আমরা তো বুঝতে পারিনি এটা যে সরকারি ইনজেকশন। তিনি সরকারি ইনজেকশন আমাদের কাছে বেচে দিয়েছেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি জানাজানি হলে নার্সদের সিনিয়র অফিসাররা এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন : স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধ হবে কবে? 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি ওষুধ বা ইনজেকশন কোনোভাবেই রোগীর কাছে বিক্রি হতে পারে না। সরকার যে ওষুধ ফ্রি দিয়েছে, সেটা তিনি কীভাবে বিক্রি করলেন। এটি একটি অনেক বড় অপরাধ। একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এটি করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জানতে পেরেছি, ভুল স্বীকার করে একটি লিখিত আবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন বিপ্রজিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাই। এ অপরাধে যদি সে বেঁচে যায় তাহলে অনেকেই এরকম অপরাধে জড়িয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে জানতে ঢামেক হাসপাতালে নার্সিং সুপারভাইজার আফরোজা বেগমকে কল করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন একটি ঘটনা আমরা শুনেছি। বিষয়টি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। এ বিষয়ের আমাদের সেবা তত্ত্বাবধায়ক শিখা বিশ্বাস ম্যাডাম বলতে পারবেন।

আরও পড়ুন : অপারেশনে স্ক্রু না লাগিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

সরকারি ইনজেকশন রোগীর কাছে বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢামেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক শিখা বিশ্বাস বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনার এত ইন্টারেস্ট কেন?’ এরপর তিনি বলেন, ‘সে ভুল স্বীকার করে আমাদের কাছে লিখিত একটি আবেদন দিয়েছে। আবেদনে এমন ভুল আর কখনো হবে না বলে ক্ষমা চেয়েছে সে। আমরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। পরবর্তীতে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাকে ওই ওয়ার্ডে ডিউটিতে আর রাখব না। তাকে ঢামেক হাসপাতালের অন্য জায়গায় ডিউটি দেওয়া হবে। দুই দিনের জন্য পূজার ছুটিতে আছে।’ ছুটি শেষে এলে তাকে অন্য জায়গায় ডিউটি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। শিখা বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা তাকে প্রথমবার সুযোগ দিয়েছি, দ্বিতীয়বার আর এই সুযোগ দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে সিনিয়র স্টাফ নার্স বিপ্রজিত মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি কল কেটে ফোন বন্ধ করে রাখেন। পরে বারবার তার ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

এসএএ/এসএসএইচ