স্বল্প আয়ের আবাসনকে নীতি প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুবিধাদি প্রদান করে সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন আলোচকরা।

বক্তারা বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর আবাসনের সংকট মূলত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য অত্যন্ত তীব্র হওয়ায় আবাসন পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের আবাসনকে বিশেষ প্রণোদনা ও প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ঢাকা মহানগরীতে মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আয়ের লোকদের আবাসন চাহিদার প্রকৃত বিশ্লেষণের পাশাপাশি আবাসনের অনুষঙ্গ হিসেবে বিদ্যালয়-হাসপাতাল- কমিউনিটি সেন্টারসহ প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদি, সড়ক অবকাঠামো, খেলার মাঠ-পার্কসহ বিনোদন সুবিধা, মৌলিক পরিষেবা প্রভৃতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত “ঢাকা মহানগরীতে সকলের জন্য মানসম্মত আবাসন : প্রেক্ষিত ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনা সংলাপের মূল প্রবন্ধে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক  এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড.আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঢাকার আবাসনের উপর ক্রমাগত চাপ ফেলেছে, যা একই সঙ্গে ঢাকামুখী অভিগমনের ও অন্যতম কারণ। বিভিন্ন আইন-বিধি-পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে অনুসৃত পরিকল্পনার স্ট্যান্ডার্ড বা মান আধুনিক নগর গড়বার সহায়ক নয়। ফলে সার্বিকভাবে সকলের জন্য মানসম্মত ও সাশ্রয়ী আবাসন যেমন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তেমনি সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও শহরের বাসযোগ্যতা চরম সংকটে পড়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতি উত্তরণে বিশ্ব বসতি দিবস ২০২২ এর প্রতিপাদ্য “বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি” লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের লোকদের জন্য ভূমির সংস্থান করা ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে আবাসন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বেসরকারি খাতে নিম্ন আয়ের লোকদের আবাসন তৈরিতে নীতি প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার দেওয়া প্রস্তাবনা স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য আবাসন জোগান বৃদ্ধি করতে পারে।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, আবাসনকে শুধুমাত্র ‘থাকবার জায়গা’ হিসেবে বিবেচনা না করে ব্যাপক অর্থে আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবার জন্য পরিকল্পনা কৌশল নির্ধারণ করা উচিত। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার আবাসন চাহিদা ও জোগানের আলোচনায় প্রাধান্য পাওয়া উচিত মূলত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবাসন সংকটের বিষয়টি। অথচ ড্যাপ নিয়ে ভবনের উচ্চতা কিংবা ‘এফএআর (ভূমির সাপেক্ষে ভবনের মোট মেঝের ক্ষেত্রফলের অনুপাত)’ সংক্রান্ত আলোচনার মূল কেন্দ্রে আছে উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্তরা।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপে নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য আবাসন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। পূর্বের রুরাল সেটেলমেন্ট জোনসহ অনেক এলাকায় আগের চেয়ে বেশি উচ্চতার ভবন করার প্রস্তাবনাও আছে ড্যাপে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নীলোৎপল অদ্রি বলেন, দেশে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের উদ্যোগে সামাজিক আবাসনের কিছু উদ্যোগ চলমান আছে, তবে তার গতি বাড়াতে হবে ও নগর এলাকায় যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে যা জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালায় ও আছে। এছাড়া ‘পুনর্বাসন নীতিমালা (রিসেটেলমেন্ট প্ল্যান)’ করার মাধ্যমে যেকোনো প্রকল্প কিংবা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

এএসএস/এসকেডি