ড্যাপ পুরো ঢাকা মহানগর অঞ্চলের জন্য একটি সার্বিক ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা। এতে শুধু ইট কাঠের দালান এবং এফএআর নয়, বরং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নাগরিক সুবিধা, অবকাঠামোসহ নানাবিধ প্রস্তাবনা রয়েছে। রাজউক যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শকে স্বাগত জানায় এবং অসত্য তথ্যকে নিন্দা জানায়।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে ঢাকা মহানগরীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (২০১৬-২০৩৫) প্রজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের আলোচনা সভার পর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে।

রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি) থেকে দাবি করা হচ্ছে যে রাজউক কর্তৃক প্রণীত ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ এর প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহর থেকে নাকি প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষকে চলে যেতে হবে। প্রকৃত সত্য হলো, রাজউকের আওতাধীন ১৫২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিবিএস ২০১১ অনুযায়ী, জনসংখ্যা ১৫ দশমিক ৫১ মিলিয়ন বা দেড় কোটি। বর্তমানে যা প্রায় দুই কোটি এবং ২০৩৫ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা ধরা হয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ, যা কোনোভাবেই কম তো নয়ই, বরং ৬০ লাখ অতিরিক্ত লোক ঢাকা শহরে অভিগমন করবে বা সংযোজন হবে।

বর্তমানে ড্যাপের সুপারিশ করা গড় ঘনত্ব অনুযায়ী, রাজউক এলাকায় পরিণত অবস্থায় সর্বোচ্চ প্রায় ৬ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ ধারণ করা সম্ভব হবে। সুতরাং বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ৪০ শতাংশ মানুষকে বের হয়ে যেতে হবে এরকম তথ্য একেবারেই সত্য নয়। বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাধারণ মানুষকে উসকানি প্রদান করতে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন : বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ড্যাপের পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন

রাজউকের ব্যাখ্যায় বলা হয়, সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য পদ্মা ব্রিজ নির্মাণের ফলে ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে মানুষের অভিগমন এবং বসতি স্থাপন দ্রুততর হবে। এছাড়া সাভার-গাজীপুর অঞ্চলে শিল্প ও সংশ্লিষ্ট ভূমি ব্যবহারের কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূল ঢাকার চেয়ে তুলনামূলক দ্রুততর হবে। ড্যাপ পুরো ঢাকা মহানগর অঞ্চলের জন্য একটি সার্বিক ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা। এতে শুধু ইট কাঠের দালান এবং এফএআর নয়, বরং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নাগরিক সুবিধাদি, অবকাঠামোসহ নানাবিধ প্রস্তাবনা রয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেন, আবাসন যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, একইভাবে স্বাস্থ্য, সেইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশও কি মানুষের মৌলিক অধিকার নয়? শুধু বড় ইমারত নির্মাণ কি মানুষের সেই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বা পারছে? ২০০৮ সালের আগে ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা। ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ কার্যকরের পর একই জমিতে দেড় থেকে দুই গুণ ইমারত নির্মাণের পরও বর্তমানে ফ্ল্যাটের মূল্য বর্গফুট ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বরং বর্তমান ড্যাপে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সুলভ আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্যে এই প্রথম ০.৭৫ প্রণোদনা এফএআর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেন মানুষ ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে একটি ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা অর্জন করে।

অন্যদিকে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের ড্যাপ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের কনভেনর স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনস্টিটিউটের পক্ষে থেকে দাবি তুলে ধরে বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ২০৩৫ সাল পর্যন্ত প্রাক্কলিত জনসংখ্যা, প্রস্তাবিত উন্নয়ন এবং সাম্যতার ভিত্তিতে সকলের আবাসন নিশ্চিত করেই কেবল এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব ও এফআর নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। ড্যাপে প্রস্তাবিত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের উৎস, সংশ্লিষ্ট উদ্যোগী সংস্থার দায়বদ্ধতা ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা নিশ্চিত সুস্পষ্টিকরণ করতে হবে। পাশাপাশি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক নয়, বরং কারিগরি দক্ষ জনবল ভিত্তিক কাঠামো পুনর্গঠন প্রয়োজন।

এএসএস/এসএসএইচ