জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও ছয়টি সদস্য পদ গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শূন্য অবস্থায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক বিশ্ব প্রশ্ন তুলছে, ঠিক সেই সময়ে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান পদ এক মুহূর্তের জন্য শূন্য থাকা দুঃখজনক। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই পদে যোগ্য ব্যক্তিকে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিগগিরই মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এ বিষয়ে সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম. কে রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকা উচিত নয়। দ্রুতই মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগ হওয়া উচিত। 

ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি মনে করি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে সাবেক আমলাদের নিয়োগ দেওয়া সমীচীন নয়। বিভিন্ন কারণে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সোচ্চারভাবে কথা বলতে পারেন না। এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, কথা বলেন, এমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সাবেক বিচারপতি হতে পারেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হতে পারেন বা কোনো মানবাধিকার ব্যক্তি হতে পারেন। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

আরও পড়ুন>> জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাদ পড়ল রাশিয়া

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ার‌ম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানবাধিকার সংরক্ষণে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এই কমিশনের চেয়ারম্যান পদ শূন্য রাখা আইনসঙ্গত নয়। আমি মনে করি এটা আইন মন্ত্রণালয়ের চরম ব্যর্থতা। মানবাধিকার বর্তমানে একটি বড় ইস্যু। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই মুহূর্তে মানবাধিকার কমিশন পদশূন্য রাখলে তারা ভেবেই নেবে মানবাধিকার কমিশন কাজ করুক এটা তারা চায় না। পুলিশের আইজিসহ বিভিন্ন পদে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। কিন্ত গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মানবাধিকার কমিশন পদ শূন্য রয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

এই আইনজীবী বলেন, সম্প্রতি ইডেন কলেজে জোর করে দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এটা গুরুতর অভিযোগ। মানবাধিকার কমিশনের ওই ঘটনা তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু কমিশনের চেয়ারম্যানই নেই। কার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করবে? আমার কাছে মনে হয় সংশ্লিষ্টরা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদ শূন্য হওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নলেজে দেননি। যোগ্য ও সাহসী একজন মানুষকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সদস্য পদগুলো শূন্য থাকার বিষয়টি আমি অবগত। প্রধানমন্ত্রীও জেনেছেন। শিগগিরই আমরা মিটিং করে কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিটি নিয়োগ দেবো।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদ্য সাবেক হওয়া চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আমাকে তিন বছরের জন্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ও ছয়জনকে কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর আমাদের কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ ও ছয়টি সদস্য পদ শূন্য রয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদগুলো শূন্য রয়েছে। এখন কমিশনের সচিব নারায়ণ চন্দ্র সরকার সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদগুলো শূন্য হলেও এখনও কমিশনের ওয়েবসাইটে চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে বিদায়ী কমিটির ছবি ও পরিচয় শোভা পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তিন বছরের জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান  সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব নাছিমা বেগম। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান, সার্বক্ষণিক সদস্য ও পাঁচজন অবৈতনিক সদস্যকে নিয়োগ দেন। কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য পদে নিয়োগ পান সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ।

আর পাঁচ অবৈতনিক সদস্য পদে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তৌফিকা আফতাব, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা, সাবেক জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মিজানুর রহমান খান ও সাবেক সচিব নমিতা হালদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কমিশনের মেয়াদ গত ২২ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে।

এমএইচডি/জেডএস