চীন থেকে যন্ত্রাংশ এনে বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল মোবাইল তৈরি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার আ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর)।

এসব ব্র্যান্ডের দেশীয় প্রস্তুতকারক ও পরিবেশকদের একটি মামলার প্রেক্ষিতে গত শনিবার (৮ অক্টোবর) অভিযান চালিয়ে মোতালেব প্লাজা ও মোতালেব টাওয়ার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন মশিউর রহমান, সাগর হোসেন, রহমত আলী, সুজন আলী, তরিকুল ইসলাম বাবু ও মনির হোসেন। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে নোকিয়া ব্রান্ডের ৩১৩ টি ফোন, স্যামসাংয়ের ২০৬ টি ফোন, নকল মোবাইল তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি মেশিনসহ ফোন তৈরির বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়।

সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে  ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার বিখ্যাত মোবাইল ফোন মার্কেট মোতালেব প্লাজার পেছনের এক বাড়িতে দীর্ঘ দিন থেকে তৈরি করা হচ্ছিলো নকল নোকিয়া ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন। ফাইভ পাস দুইজন মোবাইল মেরামতকারীর নেতৃত্বে ছয় জনের একটি চক্র কয়েক বছর যাবত এসব মোবাইল প্রস্তুত ও বাজারজাত করে আসছিল।

তিনি বলেন, এসব নকল ফোন বিক্রির কারণে সরকার ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। নষ্ট মোবাইল মেরামত করার কথা বলে চীন থেকে যন্ত্রপাতি কিনে আনতো চক্রটি। যা খালাস হতো চট্টগ্রাম বন্দরে। এই যন্ত্রপাতি এক জায়গায় করে কোনো নিয়ম না মেনে অবৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত করা হতো নোকিয়া ও স্যামসাংয়ের মতো ব্র্যান্ডের মোবাইল। এসব মোবাইল এক থেকে দুই মাসে নষ্ট হয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন,  এসব মোবাইলের রেডিয়েশন তারতম্য বা নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে না তাই ব্যবহারকারীর চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। মোবাইল বিস্ফোরণের সম্ভাবনাও থাকে সব থেকে বেশি।আইএমইআই নম্বর না থাকায় এসব মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই অপরাধ করতে পারে। এতে তাদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটি পাঁচ ছয় বছর ধরে এই কাজ করে আসছিল। তারা ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নামি দামি মার্কেটে এসব ফোন ছড়িয়ে দেওয়ার বড় ধরনের পরিকল্পনা করেছিল। এই চক্রের কিছু লোক আছে যারা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে কম টাকায় ফোনগুলো সাপ্লাই দিত। যে সকল ক্রেতা সস্তায় ফোন কিনতে চাইত দোকানদাররা মূলত তাদের টার্গেট করে এসব মোবাইল গছিয়ে দিত। এই চক্রের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ীরা জড়িত আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী জড়িত আছে কিনা সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।

কী প্রক্রিয়ায় মোবাইলগুলো বিক্রি করা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন দামি ব্র্যান্ডের এই নকল মোবাইলগুলো নানা মার্কেটের সাপ্লায়ারদের কাছে তারা বিক্রি করতো। অরজিনাল মোবাইলের দাম থেকে তারা স্বল্পমূল্যে এসব মোবাইল সাপ্লায়ারদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।

এমএসি/এমএ