দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ে নব্বই দশকের শুরুতে কর্মী পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। দীর্ঘসময় পার হলেও দেশটিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী যাচ্ছেন দেশটিতে। তবে শিগগিরই নতুন মাত্রা যুক্ত হ‌তে যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে যা‌চ্ছে ঢাকা-বন্দর সেরি বেগাওয়ান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে শনিবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকায় আসছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়া। সুলতানের প্রথম বাংলাদেশ সফরের সময় নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রুনাইয়ের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার। দেশটিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী যাচ্ছে। এবার সুলতানের সফরে দেশটির সঙ্গে শ্রমবাজার সংক্রান্ত একটি এমওইউ স্বাক্ষর হবে। চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হলে ব্রুনাইয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায়ও কর্মীর কর্মসংস্থান হবে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্রুনাইয়ে বেসরকারিভাবে কর্মী যাচ্ছে। কর্মী প্রেরণে চূড়ান্ত চুক্তি হয়ে গেলে সরকারি-বেসরকারি দুই পদ্ধতিতে কর্মী যেতে পারবে। ব্রুনাই ভিশন-৩৫ বাস্তবায়নে নির্মাণ খাতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলোর জন্য কর্মীর দরকার আছে। বাংলাদেশ থেকে তারা কর্মী নিতে চায়। এছাড়া ব্রুনাইয়ে চীন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে দেশটির (চীন) আগ্রহ রয়েছে।

১৯৯২ সাল থেকে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। সে বছর দেশটিতে ২২৮ জন কর্মী যান।  দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি না থাকায় বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনায় কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে। এতে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতারিত হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে ভুয়া চাকরিপত্র নিয়ে সেখানে প্রতারিত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে ব্রুনাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। দেশটিতে কর্মদের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকেও ভালো। তবে দেশটির সঙ্গে কর্মী প্রেরণে চুক্তি দরকার। দেশটিতে অবকাঠামো নির্মাণ খাত ছাড়াও নার্স, গৃহকর্মী, কৃষি ও প্রকৌশলী খাতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে বলে ভাষ্য সংশ্লিষ্টদের।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির তথ্য বলছে, ১৯৯২ সালে ২২৮ জন কর্মী দিয়ে ব্রুনাইয়ের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান শুরু হয়। ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৪৮০ জন, ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৬২৮, ২০২০ সালে ৫৩০ এবং গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশটিতে কর্মী গেছে মাত্র ১০ জন। গত ৩০ বছরে দেশটিতে মোট কর্মী গেছে ৭৫ হাজার ৪৩৩ জন। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে মাত্র একজন কর্মী যায় দেশটিতে, যা এ যাবতকালে সর্বনিম্ন।

গত ৩০ বছরে ব্রুনাইয়ে কর্মী যাওয়ার ধারাবাহিকতা বিভিন্ন সময়ে হোঁচট খেয়েছে। তবে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর্মী যাবার সংখ্যা খুব ধারাবাহিক ছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে ব্রুনাইয়ে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে ব্রুনাইয়ে কর্মীর কর্মসংস্থানে কমেছে। আশা করছি, সামনে চুক্তিটা হয়ে গেলে কর্মী যাওয়ার বিষয়টা আরও সহজ হবে।

গত মঙ্গলবার ব্রুনাইয়ের সুলতানের ঢাকা সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বর্তমানে ব্রুনাইয়ে কাজ করছেন। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়টি দেশটির সুলতানের সফরে প্রাধান্য পাবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি সেতিয়া হাজি এরিওয়ান বিন পেহিন দাতু পেকারমা জয়া হাজি হোহদ ইউসুফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। সেই বৈঠকে ব্রুনাইয়ের মন্ত্রী বলেন, ব্রুনাই সরকার অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় এবং অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে সদা তৎপর। বাংলাদেশ-ব্রুনাই মানবপাচার প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন, সুলতানের সফরে বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। এটি হলে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সম্প্রসারিত ও নিরাপদ করবে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো চাই আমাদের বেশি বেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হোক। ব্রুনাইয়ের সঙ্গে শ্রমবাজার নিয়ে চুক্তি হলে সেদেশে আমাদের আরও কর্মীর কর্মসংস্থান হবে।

এনআই/এসকেডি