ফাইল ছবি

সৌদিগামী কর্মীদের পাসপোর্ট জমা ও ভিসা দেওয়ার কাজ ঢাকার সৌদি আরবের দূতাবাস থেকে করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি দূতাবাসের বদলে এসব কর্মযজ্ঞ ‘শাপলা গ্লোবাল সার্ভিসেস’ থেকে করা নিয়ে দূতাবাস ও জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সঙ্গে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) বলছে, সৌদি দূতাবাস শাপলা সেন্টার নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সব এজেন্টকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। তবে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সৌদি দূতাবাস গত ৭ অক্টোবর একটি নোটিশের মাধ্যমে শাপলা সেন্টারে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। এরপর আর কোনো নোটিশ ইস্যু করেনি।

সৌদি মিশনের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) পর্যন্ত দূতাবাস পাসপোর্ট জমা নেওয়া, ভিসা দেওয়াসহ সব ধরনের কাজ করেছে। মাঝে শুক্র ও শনিবার (১৪ ও ১৫ অক্টোবর) দূতাবাস বন্ধ থাকায় এসব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দূতাবাস রোববার (১৬ অক্টোবর) থেকে চালু হলে আগের মতো দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদিগামী কর্মীদের পাসপোর্ট জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া দূতাবাস থেকে বাতিল করার বিষয়ে অনেক দিন থেকে আলোচনা চলছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে এ বিষয়ে জোরালো আলোচনা হয় এবং ভিএফএস গ্লোবালের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি তাশিশের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা। এরপর গত মে মাস থেকে দেশের ১৮টি রিক্রুটিং এজেন্সি শাপলা সেন্টার প্রতিষ্ঠার পেছনে চালকের ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছিল। তারা দূতাবাস এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শাপলা সেন্টারে সৌদিগামীদের কর্মযজ্ঞ শুরু করার বিষয়ে বেশ অগ্রগতিও অর্জন করে। সবকিছু প্রায় ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর দূতাবাস ৭ অক্টোবর এক নোটিশে শাপলা সেন্টারে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে।

আরও পড়ুন : সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা বন্ধ রাখার ঘোষণা বায়রার

দূতাবাসের নোটিশের পাঁচ দিন পর বুধবার (১২ অক্টোবর) শাপলা গ্লোবাল সার্ভিসেস একটি নোটিশ জারি করে। এর মাধ্যমেই মূলত জটিলতার সৃষ্টি। শাপলা গ্লোবাল সার্ভিসেসের নোটিশে বলা হয়, সৌদি রাজকীয় দূতাবাস সব ধরনের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করার লক্ষ্যে ‘শাপলা গ্লোবাল সার্ভিসেস’কে দায়িত্ব প্রদান করেছে। তাই সৌদি রাজকীয় দূতাবাসের নির্দেশ মোতাবেক আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নিচের ঠিকানায় উল্লেখিত তালিকা অনুযায়ী সব ধরনের ভিসা স্ট্যাম্পিং করার লক্ষ্যে পাসপোর্ট প্রদান এবং এ সংক্রান্ত আগের জমাদান প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য বৈধ লাইসেন্সধারীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৭ অক্টোবরে শাপলা সেন্টারের পাসপোর্ট নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের পর আর কোনো নোটিশ জারি করেনি দূতাবাস। তবে বায়রার অভিযোগ, দূতাবাসের অনুমতি ছাড়া শাপলা সেন্টার নোটিশ জারি করতে পারে না। দূতাবাসের অনুমিতে পেয়েই তারা এ নোটিশ জারি করেছে।

বায়রা আরও অভিযোগ করেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সংগঠনের লোকজন দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে গেলে তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, শনিবার (১৫ অক্টোবর) থেকে পাসপোর্ট আর দূতাবাসে নয়, শাপলা সেন্টারে জমা দিতে হবে। তবে অভিযোগকারীদের কাছে এ সংশ্লিষ্ট কোনো লিখিত বার্তা নেই বলে জানতে পেরেছে ঢাকা পোস্ট।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি শাপলা সেন্টার উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। মন্ত্রী যেন এটি উদ্বোধন করেন সেজন্য বায়রার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সঙ্গে আলাপও করেছে। তাদের ভাষ্য, মন্ত্রী সেখানে যেতে রাজিও হয়েছেন।

এদিকে শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক জরুরি সভা শেষে রোববার (১৬ অক্টোবর) থেকে ঢাকায় সৌদি আরবের দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বায়রা। এমন পরিস্থিতিতে সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মীদের যাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়রার সহ সভাপতি শামীম নোমান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সৌদি দূতাবাসে গত বৃহস্পতিবার আমাদের লোকজন বই জমা দিতে গেছে। তখন তাদের বলে দিয়েছে, ১৫ তারিখের পর থেকে আর আমাদের এখানে (দূতাবাস) আসবা না। ১৫ তারিখের পর বই শাপলায় জমা দেবেন। এখন যদি তারা অস্বীকার করে তাহলে তো কিছু করার নেই। আর ওরা তো লিখিত নোটিশ দেয় কম।

বায়রার সহ সভাপতি বলেন, শাপলা আমাদের নোটিশ দিয়েছে। কত তারিখে কোন লাইসেন্স জমা দেবে তার তারিখ ও সময় দিয়েছে। তারা (দূতাবাস) বলে, বাংলায় কে কী দিয়েছে সেটা আমরা কীভাবে জানব? যদি সৌদি দূতাবাস তাদের অথরিটি না দিয়ে থাকে তাহলে শাপলা এ নোটিশ জারি করল কীভাবে? শাপলার বিরুদ্ধে মামলা করে না কেন দূতাবাস? আপনার কি কোনো ক্ষমতা আছে যদি সৌদি দূতাবাস আপনাকে অনুমিত না দেয়। একটা ফরেন মিশনের অনুমতি ছাড়া এটা কখনও সম্ভব?

তিনি বলেন, যদি এটার অনুমতি দূতাবাস না দিয়ে থাকে তাহলে দূতাবাস এটার প্রতিবাদ করছে না কেন? প্রতিবাদ না করলে অর্থটা কি দাঁড়াল? যদি সৌদি দূতাবাস অনুমতি না দিয়ে থাকে, এদের (শাপলা সেন্টার) বাপের ক্ষমতা আছে সার্কুলার দেওয়ার?

আসলে জটিলতা কোথায়— এমন প্রশ্নের জবাবে বায়রার শামীম নোমান চৌধুরী বলেন, জটিলতা হচ্ছে লুকোচুরি। জটিলতা তো পরিষ্কার। এই যে লুকোচুরিটা তারা খেলছে এই লুকোচুরিটা কেন? এই লুকোচুরি করার তো কোনো দরকার নেই।

বায়রার পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে শাপলাতে কোনো রকম পাসপোর্ট জমা দেব না। যদি তারা এ ধরনের সেন্টার করতে হয় সেটা বায়রাকে দিতে হবে অথবা মন্ত্রণালয় বা বিএমইটিকে দিতে হবে। তাতে বায়রার সদস্যদের কোনো আপত্তি নেই। এর বাইরে যদি কাউকে দিতে হয় তাহলে বায়রার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষ এটি করা যাবে।

এনআই/এসএসএইচ