দেশে মূল্যস্ফীতি এখন অনেক বেশি, তবে এ অবস্থা ভবিষ্যতে আরও খারাপ হতে পারে বলে দাবি করেছে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।

রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানী শাহবাগ মোড়ে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক র‍্যালি ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়েছে। র‌্যালিটি শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সড়ক প্রদক্ষিণ করে জাদুঘরে এসে শেষ হয়।

র‌্যালি শেষে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসন, তরুণ প্রতিনিধি আরাফাত, নানজিবা ও খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা বক্তব্য রাখেন। 

এর আগে লিফলেট পাঠ করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মী পাপেল কুমার সাহা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী অনিরুদ্ধ রায়।

সংক্ষিপ্ত এই আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, আমাদের প্রতিদিনের জীবন-যাপনের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি, সরকারি ডেটার চেয়ে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। বিবিএস সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে উঠে এসেছে- দেশে খানাপিছু গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ যায় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। এদিকে বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি এখন অনেক বেশি, যা ভবিষ্যতে আরও খারাপ হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু শহরাঞ্চলে নয়, দেশজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়- যেমন জ্বালানি তেল, রান্নার চুলার গ্যাস, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, বিদ্যুৎ, গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বক্তারা আরও বলেন, সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মূল কর্মসূচি হলো ‘সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’। কিন্তু এ কার্যক্রমও নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন। বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি প্রকল্পগুলো পর্যাপ্ত এবং সর্বজনীন নয়। এ প্রকল্পগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খণ্ডকালীন, মৌসুমি কিংবা দুর্যোগকালে বা দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে স্বল্প পরিসরে অর্থাৎ অ্যাডহক ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়, যা সারা বছর সুরক্ষা প্রদানের জন্য কার্যকরী নয়। আবার সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে গ্রামাঞ্চলে শতকরা ৩৫ দশমিক ৭৭ ভাগ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তা পেয়ে থাকে। কিন্তু নগরে বসবাসকারী দরিদ্রদের মাত্র শতকরা ১৭ দশমিক ৮৪ ভাগ এ সুবিধা ভোগ করে থাকে।

করোনাকালে সৃষ্ট সংকটের পর এখনও বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বাছাই প্রক্রিয়া এবং ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যাদি বিক্রয়ে অনিয়ম অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএসএস) মধ্যবর্তী উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ভাতাভোগীদের ৪৬ শতাংশের বেশি ভাতা পাওয়ার যোগ্য নয়।

সংক্ষিপ্ত আলোচার শেষ দিকে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের পক্ষ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো- সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে নতুন দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং কর্মসূচিতে আর্থিক ও খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, প্রান্তিক ও শ্রমজীবী এবং নিম্নবিত্ত মানুষ যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, সে জন্য চাল, আটাসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা, খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও কাস্টমস ডিউটিসহ সব ধরনের শুল্ক তুলে দেওয়া, মূল্যের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পাইকারি ও খুচরা উভয় ক্ষেত্রে কঠোরভাবে বাজার তদারকি নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ‘মূল্য কমিশন’ গঠনের জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা।

এমএসি/এসএম