দশ দফা দাবি মেনে না নিলে আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহনে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাংকলরি শ্রমিক ফেডারেশন। তারা বলছেন, ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। 

সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ট্যাংকলরি শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, পরিবহন সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষ্যমের শিকার হয়েছি আমরা ট্যাংকলরি শ্রমিকরা। দেশ-বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল এনে সরকার আমাদের কাধে তুলে দেয়। আমরা তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে রাষ্ট্রীয় ও মানবিক দায়িত্ব পালন করি। বিপিসি বা মন্ত্রণালয় আমাদের মূল্যায়ন করেন না। তাছাড়া অংশীজন হিসেবে ন্যূনতম আলোচনা বা শুভেচ্ছাতেও অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয় না। অন্যদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ও বিআরটিএ মোটরযান আইন মোতাবেক ট্যাংকলরির ভিন্ন সিরিয়ালে নম্বর, রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স গ্রহণ, শ্রমিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়াসহ পরিবহনের সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।

তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত বা কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত থাকার পরেও বাংলাদেশ ট্যাংকলরি শ্রমিক ফেডারেশনকে কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে দেয় না। এটি দুঃখজনক। যে কারণে আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে পারি না এবং তা মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগও করতে না পারার কারণে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ও আপত্তিকর ঘটনা ঘটছে। 

তিনি আরও বলেন, সরকারের কোনো কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করা হয়েছে। অনেক সংগঠনকে সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, শ্রেণি, পরিবর্তনের সুবিধা, সহজ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকারের সঙ্গে ট্যাংকলরির জন্য আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে সহজে লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নির্ধারিত করা হয় নাই। তাছাড়া বিআরটিএ’র এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভুয়া নিয়োগপত্র দ্বারা গাড়ির রুট পারমিট নবায়ন করা হয়। 

দেশের ট্যাংকলরি সংখ্যা অন্যান্য যানবাহন থেকে অনেক কম। তাই এখানে প্রয়োজনের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেকার শ্রমিক বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায়, ট্যাংকলরিতে মালিক পক্ষ বাস, ট্রাক, লেগুনা ও বেবিট্যাক্সির ড্রাইভার নিয়োগ দিলে বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকবে। তাছাড়া জ্বালানি সেক্টরে শ্রমিকরা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। এ সংগঠন স্বাধীন ধারার গঠনমূলক উন্নয়নমুখি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন অনুসরণ করে। তাদের শিল্পে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন জন্ম নিলে বিদ্বেষ, বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলাসহ গোষ্ঠী ও পাল্টা গোষ্ঠীর জন্ম হবে। তাই ট্যাংকলরিতে যাতে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন সৃষ্টি না হয় তার দাবি জানাচ্ছি।

ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিগুলো

১। ট্যাংকলরি শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয় পত্র, সার্ভিস বুক দেওয়াসহ শ্রম আইন ও শ্রমবিধি অনুযায়ী শ্রমিকের যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করতে হবে।

২। ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে।

৩। পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত ৫ (পাঁচ লাখ) টাকা দুর্ঘটনা বিমা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।

৪। কেন্দ্রীয় ট্যাংকলরি টার্মিনালসহ সারাদেশে সব তেলের ডিপোর সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় সুবিধাসহ ট্যাংকলরি টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে।

৫। ট্যাংকলরি চালকদের সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। 

৬। সড়কে যত্র-তত্র চলন্ত ট্যাংকলরি থামিয়ে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৭। শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে পৃথকভাবে সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮। ট্যাংকলরি শিল্পে অপরাপর সেক্টরের শ্রমিকদের অনুপ্রবেশ ঘটানোর মালিকদের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

৯। ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন নামীয় সংগঠন থেকে “ট্যাংকলরি” শব্দটি পরিহার করতে হবে।

১০। দাহ্য পদার্থবাহী ট্যাংকলরির ক্ষেত্রে একই প্রতিষ্ঠানে একটির বেশীশি ইউনিয়ন গঠন করা যাবে না মর্মে ধারা সংশোধন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ট্যাংকলরি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান ভূইয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুল মতিন মুন্সি সহ সারাদেশ থেকে আসা ট্যাংকলরি শ্রমিক নেতারা। 

আইবি/এসএম