সাধারণত ঘি তৈরির মূল উপাদান হচ্ছে দুধ। কিন্তু চক্রটি দুধের বদলে সয়াবিন ও ডালডা দিয়ে তৈরি করতো নকল ঘি। পরে এসব ঘি তারা নকল বিএসটিআইয়ের লোগো লাগিয়ে নামি দামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত করতো।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় ভেজাল ঘি তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. মামুন পাইক (৩৭) ও মো. সাব্বির (২৫)। এ সময় গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ভেজাল ঘি তৈরির ১২০ লিটার সয়াবিন তেল, মেশিন ও ডালডাসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, চক্রটি নকল ঘি তৈরি করে নিউ ফ্রেশ গাওয়া ঘি, ফেমাস স্পেশাল গাওয়া ঘি, স্পেশাল বাঘাবাড়ী ঘি ও আড়ং ঘিয়ের মোড়কে এসব ঘি বাজারজাত করতো চক্রটি। নামি দামি ব্র্যান্ডের মোড়কে এসব ঘি বাজারজাত হওয়ায় তাদের ক্রেতা সংখ্যাও বেশি। তাদের এসব ঘি খেয়ে মানুষের হৃদপিণ্ড ও কিডনিতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে মিন্টুরোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য ঘি কোম্পানির মান ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে গ্রেপ্তাররা এবং তার পলাতক সহযোগীরা সংঘবদ্ধভাবে ভেজাল ঘি উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছিল। এতে বিভিন্ন কোম্পানির সুনাম বিনষ্টসহ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করে আসছে। এছাড়াও ভেজাল ঘি বাজারজাত করায় দেশের সাধারণ জনগণ ওই ঘি বাজার থেকে কিনে বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিসহ কোমলমতি শিশুদেরও খাওয়াচ্ছে। যা তাদের জীবননাশের হুমকি সম্মুখীনসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করছে।

গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ ভেজাল ঘি উৎপাদন, মজুদ, বিক্রয় ও
বাজারজাতকরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ও অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানির ঘি ভেজালভাবে প্রস্তুত করে অধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বাজারজাত করে আসছে। এই সমস্ত ভেজাল ঘি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ডেমরা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

জব্দ হওয়া ঘি যে ভেজাল তা কীভাবে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘি সাধারণত তৈরি হয় দুধ দিয়ে। কিন্তু কারখানাটিতে অভিযান পরিচালনা করার সময় দেখেছি সেখানে সয়াবিন, ডালডা ও বিভিন্ন কেমিক্যাল তৈরি করা হচ্ছিল। আসামিরাও স্বীকার করেছে তারা নকল ঘি ঐ কারখানায় তৈরি করছিল।

নকল ঘিয়ের অভিযানে ডিবির সঙ্গে বিএসটিআই ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযানটি আমরা একাই পরিচালনা করেছি। এছাড়া ঘিয়ের গায়ে বিএসটিআইয়ের সিলটিও নকল লাগিয়েছে তারা ক্রেতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য।

নকল ঘি কোন কোন এলাকায় বেশি সাপ্লাই করা হতো এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি ডিসি ওয়ারী বলেন, আসামিদের রিমান্ডে এনে আমরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব। আমরা জানার চেষ্টা করব, কাদের কাছে ঘি সাপ্লাই হতো এবং কারা কারা তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে বিক্রি করতো। তবে তারা যেহেতু দেশের নামি দামি ব্র্যান্ডের ঘিয়ের নকল করতো তাই তাদের গ্রাহক সংখ্যাও অনেক বেশি।

ক্রেতারা এই নকল ঘি কিভাবে চিনবে প্রশ্ন করা হলে এই ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে এই নকল ঘি চিনার কোনো উপায় নেই। নামি-দামি ব্র্যান্ডের ঘিয়ের হুবহু একই আদলে নকল ঘি প্যাকেট জাত করা হয়। এই জন্যই এইটা এখন চিন্তার বিষয়। যেসব বড় বড় দোকানিরা এসব ঘি বিক্রি করছেন তাদেরকেও আমরা সন্দেহের তালিকায় রেখেছি।

এক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের কোনো দায় আছে কিনা জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আসলে তারা মূলত বিএসটিআই’র লোগো নকল করে লাগাচ্ছে। বিএসটিআই নিশ্চয়ই তাদের নকল ঘি তৈরি করার অনুমোদন দেয়নি।

এমএসি/এমএ