অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নের সংস্থাগুলো বড় বড় কথা বললেও প্রকৃত সেবা দিতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রী শ্রম অধিকার ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সামাজিক ন্যায়বিচার ও শোভন কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠায় আইএলও এবং বাংলাদেশ সরকারের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ড. মোমেন বলেন, আইএলও বিশ্বজুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখার পক্ষে আরও সোচ্চার অবস্থান নেবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নের সংস্থাগুলো প্রায়ই অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে মুখের সেবা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি আইএলও তাদের ত্রিপক্ষীয় কাঠামোকে এড়িয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা আদর্শগতভাবে হওয়া উচিত নয়। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে গৃহীত যে কোনো প্রকল্পে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট করা উচিত এবং এটি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শমূলক ব্যবস্থার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, তদারকি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সক্ষমতা তৈরিতে আইএলও প্রকল্পগুলোকে প্রস্তুত করার পক্ষে আমরা। আমরা আইএলওর নিজস্ব কর্মীদের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করার প্রবণতা লক্ষ্য করি, যা প্রায়ই জাতীয় এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উপর টেকসই প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়। আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আইএলওকে একটি অংশীদার হিসেবে দেখতে চাই।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মোমেন। তিনি বলেন, সরকার ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রয়েছে। আমাদের তরুণ কর্মশক্তির জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং দরিদ্র পরিবারগুলোর মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সহায়তা করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রসারিত করা হয়েছে।

‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দার মুখে কিছু প্রমাণিত নীতি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা উচিত’, যোগ করেন মোমেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইএলও’র যৌথভাবে আয়োজিত সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তব্য দেন। 

কর্মক্ষেত্রে মৌলিক নীতি ও অধিকারের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পদক্ষেপসমূহ নিয়ে আগত অতিথিদের কাছে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইএলও'র আঞ্চলিক পরিচালক ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল চিহোকো আসাদা-মিয়াকাওয়া। তিনি ৮টি মৌলিক কনভেনশন, দুইটি গভর্নেন্স কনভেনশন ও ২৬টি টেকনিক্যাল কনভেনশন অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন এবং এই শ্রম মানদণ্ড বাস্তবায়ন আরও তরান্বিত করতে আহ্বান জানান।

আসাদা-মিয়াকাওয়া বলেন, ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অন্যান্য ১৮১টি দেশের মতো বাংলাদেশও সর্বসম্মতিক্রমে মানব-কেন্দ্রিক পুনরুদ্ধারের জন্য ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন’ গ্রহণ করেছে, যা কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের জননীতি আগের তুলনায় আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও অদম্য হতে হবে। উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলকে স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ প্রদান করতে হবে।

 শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. এহসান- ই-এলাহী বলেন, এসডিজি লক্ষ্য ৮ অর্জনে নেতৃস্থানীয় মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা শ্রম-খাতের সংস্কার, জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ২০২৫ সাল নাগাদ শিশুশ্রম নির্মূল, কর্মসংস্থান বিমা প্রকল্প ও কর্মসংস্থান বিভাগ তৈরি করে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে এই উদ্যোগগুলো সাহায্য করবে।

সেমিনারে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি আরদাশির কবির বলেন, বিইএফ নিয়োগকর্তাদের শিল্প সংক্রান্ত নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে এবং শ্রম সংক্রান্ত বিষয়ে সমন্বিত মতামত সরকারের নজরে আনতে ভূমিকা রাখে। আমরা বিশ্বাস করি যে, কর্মক্ষেত্রে শ্রম অধিকার ও ইন্ডাস্ট্রি রিলেশন উন্নত করতে বেসরকারি খাতগুলো ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসিডব্লিউই) সভাপতি শামীম আরা বলেন, আমাদের লাখ লাখ শ্রমিক দৈনন্দিন যেসব প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এনআই/এসকেডি