সোমবার (১ মার্চ) গভীর রাতে মানুষের নিরাপত্তায় ডিউটি করছিলেন মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পুলিশ কর্মকর্তা মো. নাঈমুর রহমান নীল। তবে দায়িত্বরত অবস্থায় এ পুলিশ সদস্যকে সইতে হয়েছে মশার দুর্বার যন্ত্রণা। মশার কামড় খেতে খেতে কাটিয়েছেন সারারাত।

অতিষ্ঠ নাঈমুর ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘সত্যিই সেদিনের ডিউটির কষ্টটা সইতে পারছিলাম না। পাঁচটি মশার কয়েল জ্বালিয়েও কাজ হচ্ছিল না।’

তার হাতে বসে কামড়াতে থাকা মশাগুলোর ছবিও তুলেছেন তিনি। এগুলোকে ঢাকার প্রতীকী ছবিও বলা যায়। গোটা ঢাকায় মশার এমন জ্বালায় অতিষ্ঠ সবাই। কাজ হচ্ছে না কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা অ্যারোসল দিয়েও

সারাহ হাসান নামের মিরপুর শেওড়াপাড়ার এক জন বলেন, ‘আগে সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত বেড়ে যেত। তবে এখন সকাল-সন্ধ্যা একই অবস্থা। সারাদিন বারান্দার গেট ও জানালা বন্ধ রাখতে হয়। মশার ভয়ে ছাদে যাওয়া বাদ দিয়েছি। বাসার ভেতরে অ্যারোসল দিলেও কাজ হয় না। ২-১ দিন পরপরই সিটি করপোরেশন থেকে ওষুধ ছিটানো হয়, তাও মরছে না মশা।’

শুধু মিরপুর নয়, নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। তারা বলছেন, আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার মশা অনেক বেশি। বিশেষ করে উত্তরা, গুলশান, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকার লেকগুলো ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় এখানেও মশা বেশি। ওষুধ দিলেও কাজ হচ্ছে না। মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্প এলাকায়ও আছে মশার উপদ্রব।’

মিরপুরসহ এর আশপাশের এলাকায় মশকনিধন বিষয়ে মঙ্গলবার (২ মার্চ) কাউন্সিলরদের সঙ্গে সভা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আগামী ৮ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কিউলেক্স মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু হবে। ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের সব মশকনিধনকর্মী যান-যন্ত্রপাতি নিয়ে অভিযান চালাবেন। ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিটরিংয়ের কাজ করবেন। জিআইএস ম্যাপিং করা হচ্ছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ অভিযান পরিচালিত হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কিট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডিএনসিসি অনেক বড় এলাকা, পুরো এলাকাতেই আমাদের মশক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সব এলাকাতেই আমরা কাজ করছি। তবে অনেক জায়গা যেমন- পুকুর, জলাশয়, খালের সব স্থানে আমরা বা আমাদের মশকনিধন কর্মীরা পৌঁছাতে পারেন না। সে কারণে ড্রোনের মাধ্যমে মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস অবশ্য মশার উৎপাতের জন্য ওয়াসাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াসা থেকে আমাদের কাছে যে খালগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে, এগুলো যদি আরও দুই মাস আগে আমরা পেতাম, তাহলে আমরা আরও আগে থেকেই বর্জ্যগুলো অপসারণ করতে পারতাম। ফলে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো।’

তিনি বলেন, ‘খালগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণ এবং মশার কীটনাশক পরিবর্তনের কারণে আমরা আশাবাদী, আগামী দুই সপ্তাহ পর থেকে মশার এমন প্রভাব থাকবে না। কিউলেক্স মশাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। এছাড়া এসব কিছু কার্যক্রম চলার কারণে আগামী বছর থেকে কিউলেক্স মশা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ মশকনিধন অভিযান শুরু করে ডিএনসিসি। এই অভিযান শেষ হয় রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। বিশেষ অভিযানে মোট ৪৪ হাজার ৯৬৮টি সড়ক, নর্দমা, জলাশয়, স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ২১০টিতে মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৩০ হাজার ১২৯টিতে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। মশার লার্ভা ও বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া এবং অন্যান্য অপরাধে ৮৯টি মামলায় মোট ১০ লাখ ৮২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এই কয়েকদিনে।

এআর/এফআর