হঠাৎ টালমাটাল চিনির বাজার নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মতবিনিময় সভার আয়োজন ছিল আগে থেকেই। সে অনুযায়ী কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের ইসলামিয়া শান্তি সমিতির ব্যবসায়ীরা কেন চিনি বেশি দামে বিক্রি করছেন, সভার এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছিলো। ব্যবসায়ীরা নিজের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সময়ই তাদের 'ভুল' তথ্যগুলো ধরে ফেলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আর তখনই বেঁধে যায় বাগবিতণ্ডা।

রোববার (২৩ অক্টোবর) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এই বাগবিতণ্ডা বাঁধে।

চিনির দাম কেন বেশি এ বিষয়ে নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন কারওয়ান বাজারের আমিন ব্রাদার্সের বাবলু রহমান। তিনি ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের বলেন, আমাদের কিছু করার নেই, মার্কেটে চিনি নেই। বিভিন্ন জায়গায় থেকে আমরা ম্যানেজ করে আনছি, সেখানে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।

এ সময়ই বাগবিতণ্ডার শুরু হয়। ব্যবসায়ীদের এমন যুক্তির ভুল ধরে বসেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, আপনারা কোথা থেকে বেশি দামে চিনি কিনছেন, সেটা জানান। আমরা সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
 
এ সময় চিনি ব্যবসায়ী বাবলু রহমান কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বলেন, আমরা অনলাইন থেকে কিনি। মূলত যারা চিনি সাপ্লাই দেন মার্কেটে সেই কোম্পানিগুলো চিনি সাপ্লাই দিচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বর মাসে এক ট্রাক চিনির অর্ডার দিয়ে রেখেছি, কিন্তু এখনও ডেলিভারি পাইনি। সেই প্রভাব বাজারে পড়েছে। সে কারণে অনলাইনের এক মার্কেট থেকে চিনি কিনেছি। প্রতি কেজি ১০০ টাকার বেশি কেনা পড়েছে।

ব্যবসায়ীর এমন যুক্তিতে পাল্টা যুক্তি দিয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম  সাইফুজ্জামান বলেন, যেই অনলাইন থেকে আপনি বেশি দামে চিনি কিনলেন তার রিসিট দেখান। কিন্তু রিসিট নেই উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, তারা রিসিট দেয় না। চিনি নিলে নেও, না নিলে না নাও এমন নীতি। যে কারণে কাস্টমার ধরে রাখতে আমরা বাধ্য হয়ে রিসিট ছাড়াই বেশি দামে চিনি কিনেছি।

এবার বেশি দামে চিনি বিক্রি করার বিষয়ে আরেক ব্যবসায়ী ডিলার জামাল হোসেন বলেন, চিনি চেয়ে কোম্পানির কাছে আমি সেপ্টেম্বরে ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) লেটার দিয়ে রেখেছি, কিন্তু এখনও পাচ্ছি না। তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরা কীভাবে টিকে থাকবো বাজারে? তাই অন্যভাবে চিনির ম্যানেজ করতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে, বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এমন যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম  সাইফুজ্জামান সেই ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করেন, আপনি ক্রেতাকে রিসিট দিচ্ছেন চিনি বিক্রির পর? জবাবে সেই ব্যবসায়ী বলেন, আমি নিজেই রিসিট পাচ্ছি না তাহলে ক্রেতাকে কেন দেব। আবার অনেকে রিসিটও চায় না। 

এ সময় পাশ থেকে অন্যরা বলেন তার (ডিলার জামাল হোসেন) গোডাউনে চিনি আছে। এই কথা শুনে মহাপরিচালক বলেন, আপনার গোডাউনে চিনি তো অনেক আছে। তারপরও যদি এই মার্কেটে ক্রাইসিস থাকে তাহলে জরিমানা হবে। এভাবেই পুরো আলোচনা সভা জুড়েই চলে ব্যবসায়ী আর জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বাগবিতণ্ডা।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইসলামিয়া শান্তি সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকারের পরিচালক মনজুর মোহম্মাদ শাহরিয়ার, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নানসহ কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

এএসএস/জেডএস