ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর প্রভাবে রাজধানীর অন্তত দুই শতাধিক স্থানে ভেঙে পড়েছে গাছ। টানা বৃষ্টিতে পানি জমে কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অধিকাংশ স্থানেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন সড়ক থেকে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিয়েছে। তবে এখনো যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে বেশ কিছু সড়কে।

ফায়ার সার্ভিস, ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাজধানীর ৪৭ স্থানে গাছ পড়ার খবর পেয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটেছে দুটি, আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আছে ১৭টি। আর বর্তমানে ৬টি স্থানে গাছ অপসারণের কাজ চালাচ্ছেন ফায়ারের কর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে। তবে এতে কোনো হাতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : প্রস্তুতি ও মোকাবিলা জরুরি 

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে সন্ধ্যার পর ঢাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ঢাকায় এ সময় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে সচিবালয়ের দিকে একটি বড় ইউক্যালিপটাস গাছ ভেঙে পড়ে। গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তার অনেকটা অংশ বন্ধ হয়ে যায়। 

যোগাযোগ করা হলে রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৎস্য ভবনের সামনে একটি লেনে যানচলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। রাতে একটি বড় গাছ পড়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। নিউ মার্কেট এলাকায় একটি গাছ এখনো সড়কে পড়ে আছে। সেখানে একটি লেন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে, তারা কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর প্রভাবে রমনা ট্রাফিক এলাকার অন্তত ২৫ স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছিল। খবর পাওয়ার পর থেকে খুব দ্রুতই স্থানীয়দের সহযোগিতায় ট্রাফিক পুলিশ সেগুলো অপসারণে কাজ শুরু করে। যেগুলো পুলিশ সদস্যরা অপসারণ করতে পারছিলেন না তা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সরানো হয়েছে। আপাতত মৎস্য ভবন ও নিউ মার্কেট এলাকায় সমস্যা রয়ে গেছে।

অন্যদিকে মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মইনুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৪টি স্থানে গাছ পড়ার খবর আমরা পেয়েছিলাম। অধিকাংশ স্থানেই অপসারণ সম্ভব হয়েছে। তবে শান্তিনগর পুলিশ লাইনের বিপরীতে ডিটিএস এর সামনে একটি বড় গাছ পড়েছে। তা এখন পর্যন্ত অপসারণ সম্ভব হয়নি। এতে সে সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক বার্তা দেওয়ার পর ডিটিএস কর্তৃপক্ষ তাদের লোকজন নিয়ে আসার পর গাছ অপসারণের কাজ শুরু করেছে। সিটি করপোরেশনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন : জলবায়ু পরিবর্তন : তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ১৩ শতাংশ ভূমি   

তিনি জানান, গুলিস্তানের মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের সীমানার ভেতরে বড় একটি গাছ ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। 

ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের রামপুরা ট্রাফিক জোনে বনশ্রী ইউলুপের মুখে গাছ ভেঙে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সার্জেন্ট শুভ কুমার দে ফোর্সসহ গাছ কেটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছেন।

অন্যদিকে রাত ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাস স্টপেজের কাছে উত্তর রায়েরবাগে প্রবেশের মুখে বাঁশের একটি তোরণ ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সকালে সেটি অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়ারি ট্রাফিক বিভাগ।

রাজধানীর গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক স্থানেই গাছ পড়ে চলাচল বিঘ্নিত হয়েছিল। আমরা এরইমধ্যে সবার সহযোগিতায় অন্তত ৩০ স্থানে যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে পেরেছি। বেশ কিছু স্থানে এখনো সমস্যা রয়েছে। তবে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার মতো নয়। 

তিনি বলেন, ইসিবি চত্বর, গুলশান-২ থেকে নতুন বাজার রুটে বড় গাছ পড়েছিল। সব অপসারণ করা হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে দুটি স্থানে এখনো যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। উত্তরা থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারের পর নামতে পানি জমেছে। সেখানে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। 

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাহেদ আল মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেজগাঁও ট্রাফিক এলাকার অন্তত ৩০ স্থানে গাছ পড়েছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে। রাতেই অনেক স্থানে গাছ অপসারণ করা হয়েছে। সকালে মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান, শ্যামলী, আদাবর, তাজমহল রোড, আগারগাঁও সহ বেশ কিছু সড়কে পড়ে থাকা গাছ ও ডালপালা অপসারণ করা হয়। তবে জলাবদ্ধতার কারণে সোনারগাঁও রুটে যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন : বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ কী? 

এক ক্ষুদে বার্তায় ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে খিলক্ষেত উত্তরা হয়ে গাজীপুরমুখী যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই সড়ক ব্যবহার না করার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

রাজধানীর ওয়ারী, লালবাগ, উত্তরা, মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ ও ডালপালা সড়কে পড়ে থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। 

যোগাযোগ করা হলে ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জানান, বাবু বাজার, গোয়ালঘাট, তাঁতীবাজারসহ অনেক স্থানেই যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে গাছ পড়ার কারণে। সিটি করপোরেশন কাজ করছে। স্থানীয়দের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। 

জলাবদ্ধতার কারণে ফুলবাড়িয়া থেকে বংশাল রুটের ডান পাশের লেন প্রায় বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।

জেইউ/জেডএস