এইচ টি ইমামের মরদেহে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
বিকেল ৩টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে রাখা হবে এইচ টি ইমামের মরদেহ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের মরদেহে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। করোনার কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি শহীদ মিনারে। তাদের পক্ষে সামরিক সচিবরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এইচ টি ইমামের মরদেহ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে অস্থায়ীভাবে নির্মিত মঞ্চে রাখা হয়েছে কফিন।
বিজ্ঞাপন
প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম বীর প্রতীক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী এইচ টি ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুকুল বোস, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আবদুর রহমান প্রমুখ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বিজ্ঞাপন
শ্রদ্ধা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এইচ টি ইমামের মতো কর্মপাগল ও কর্মনিষ্ঠ মানুষ সমাজে বিরল। তিনি দেশের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ থেকে কখনও অবসর নেননি। এইচটি ইমামের মৃত্যুতে যে শূন্যস্থান তৈরি হলো তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলেন এইচ টি ইমাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি আমাদের দলের প্রচার সেলের প্রধান ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, এইচ টি ইমাম জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের সবার কাছে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যতদিন সক্রিয় ছিলেন দেশের জন্য কাজ করেছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকার কথা আমরা সবাই জানি। মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য তিনি কাজ করেছেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ডিএসসিসি মেয়র তাপস বলেন, এইচটি ইমাম একজন অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ আগাগোড়াই একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন এবং তিনি তার প্রতিটি কর্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। তিনি একজন অত্যন্ত দক্ষ ও নিষ্ঠাবান আমলা ছিলেন। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সব পর্যায়ে তিনি তার দক্ষতা ও দেশপ্রেমের প্রমাণ রেখেছেন।
দেশের প্রয়োজনে এইচটি ইমামের অবদান তুলে ধরে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার মুক্তি সংগ্রামে তিনি বিরল ভূমিকা পালন করেছেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় এইচ টি ইমামের মরদেহে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলির এই অনুষ্ঠান চলছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তার মরদেহ নেওয়া হবে গুলশানে আজাদ মসজিদে। সেখানে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। দুপুর ১২টায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া আকবর আলী সরকারি কলেজ মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানাজা নামাজ শেষে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয় মরদেহ।
এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ২০১৪ সাল থেকে আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির দুইবার কোচেয়ারম্যান এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এইচ টি ইমাম দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এইচ টি ইমাম।
• এই প্রতিবেদনের পরবর্তী আপডেট : শহীদ মিনার থেকে এইচ টি ইমামের শেষ বিদায়
এইউএ/এনএফ/এমএমজে