বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং হবে না। কয়লাভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহসাই উৎপাদনে আসার কথা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংসদীয় কমিটিকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রোববার (২০ নভেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে লোডশেডিং কমাতে সরকারের ‍পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটি সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য মো. আবু জাহির, মো. আলী আজগার, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, খালেদা খানম এবং নার্গিস রহমান অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামের বাশখালীর এসএস পাওয়ার ওয়ান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে আসার বিষয়টি জানান। এর মধ্যে কোনো কোনো কেন্দ্র অনানুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনও শুরু করেছে বলে জানান। এ সময় তিনি সম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে লোডশেডিংয়ের সমস্যা থাকবে না। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমেও লোডশেডিং হবে না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আমাদের জানিয়েছেন। শীত মৌসুমে কোনো লোডশেডিং থাকবে না। উৎপাদনের অপেক্ষায় থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হলে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমেও লোডশেডিং থাকবে না বলে সচিব জানিয়েছেন। 

কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তুত হলেও সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি নেই, এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কী সম্ভব হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এই বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজের পাশাপাশি সমানতালে সঞ্চালন লাইনের কাজও চলমান আছে। আমরা তাদেরকে সমন্বয় করে কাজ শেষ করতে বলেছি। সঞ্চালন লাইনের কাজের গতি বাড়াতে বলেছি, যাতে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর যেন কোন কেন্দ্রকে বসে থাকতে না হয়।

এদিকে বৈঠকে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা, গেছে সারা দেশে বিদ্যুতের ৪ কোটি ৩৭ লাখ গ্রাহকের মধ্যে অক্টোবর ২২ পর্যন্ত ৬টি বিতরণ কোম্পানি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে। মোট গ্রাহকের তুলনায় প্রি-পেইড সংযোগ দেওয়া হয়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। ৬টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে বাবিউবো প্রি-ডেইড গ্রাহক ১৫ লাখ ৯০ হাজার ২৫৬টি, বিআরইবি ১৩ লাখ ১০ হাজার ৫৬৪টি, ডিপিডিসি ৬ লাখ ৫১ হাজার ৪২১টি, ডেসকো ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৬০টি, ওজোপাডিকো ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৮টি এবং নেসকো ৫ লাখ।
 
ঢাকা মহানগরীতে প্রি-পেইড স্থাপনে ধীরগতির বিষয়ে সচিব জানান, ডিপিডিসি ও ডেসকো কনসাল্টিং ফার্ম সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ৬-৭ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রি-পেইড স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বৃহত্তর ঢাকা এলাকা সম্পূর্ণ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে।

চলতি অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট মিটারগুলো পর্যায়ক্রমে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারে রূপান্তর করা হবে।

এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ১০৬ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এ সময় আইইবি ৯৫৯ কোটি ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৬২৩ টাকা আয় করেছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন ব্যয়, ঋণের সুদ, আয়কর প্রদানের পর এই নিট লাভ করেছে।

এসআর/জেডএস