ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪)। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই জঙ্গির হাতে মোটা অঙ্কের অর্থ তুলে দেয় সে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন আদালতে মেহেদী হাসান হাজিরা দিতে এসেছিল। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সে সরাসরি জড়িত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দেয় সে। পলাতক জঙ্গিরা কারাগার থেকে বের হয়ে হঠাৎ করে টাকা কোথায় পাবে, তাদের যেন টাকার সমস্যা না হয় তাই মেহেদী তাদের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দেয়।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের মোহাম্মদপুরের যে মামলায় হাজিরা দিতে নেওয়া হয়েছিল, একই মামলায় অমিও আসামি। কিন্তু অমি জামিনে থাকায় বাইরে থেকে আসামি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় অংশ নেয়। যাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাদের সঙ্গে একইসময় হাজিরা দেওয়ার সুযোগে তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অবগত করে অমি। এমনকি ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের হাতখরচের অর্থও আদালতে সরবরাহ করে সে।

তিনি বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি অমি। সে সংগঠনে রাফি হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে সে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে হিজবুত তাহরিরে যুক্ত ছিল। সরকারবিরোধী অপতৎপরতার কারণে ২০১০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ সালে জামিনে বের হওয়ার পর ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয় সে। তখন সংগঠনের নাম ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।

'অল্প দিনের মধ্যে অমির দক্ষ নেতৃত্বের কারণে তাকে আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা হয়। এরপর অমি সিলেট অঞ্চলের অনেককে সংগঠনে নিয়োগ দেয়। দক্ষ নেতৃত্ব, সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ ও অতি সাহসী কর্মী হিসেবে সে সংগঠনের মূল ব্যক্তি বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। এরপর অমিকে সংগঠনের আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়।'

অমির মাধ্যমে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি মইনুল হাসান শামীমকেও আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৬ সালে যখন ব্লগার হত্যাসহ বেশকিছু ঘটনা সংঘটিত হয় তখন সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর-বাড্ডা এলাকায় তাদের আস্তানার সন্ধান পায়। সে সময় অমিকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৭ সালে অমি আবার জামিনে ছাড়া পায়। জামিন পাওয়ার পর থেকে সে নিয়মিত হাজিরা দিত। ফলে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তার নিয়মতি যোগাযোগ ছিল।

আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অমির মাধ্যমে বন্দি জঙ্গিদের অবগত করা হয়। যারা ছিনিয়ে নেবে তাদের সঙ্গেও সমন্বয় করে অমি। তারই অংশ হিসেবে ২০ নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে।

সিটিটিসির প্রধান আরো বলেন, মামলায় হাজিরা দেওয়ার সময় অমি বেশকিছু নগদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে আসত। যা বন্দিদের বিভিন্ন খরচ নির্বাহের জন্য সরবরাহ করত। ঘটনার দিন ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদেরও খরচের জন্য অর্থ দেয় সে। তাকে রিমান্ডে এনে টাকার উৎসের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলে আমরা গ্রেপ্তার করব এবং আপনাদের জানাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য ১২ জঙ্গিকে আনা হয়। সেখান থেকে চার জনকে ছিনতাইয়ের পরিরিকল্পনা ছিল। বিষয়টি চার জঙ্গিই জানত। তাদের প্রধান প্রায়োরিটি ছিল আরাফাত, দ্বিতীয় ছিল শামীম। শামীমকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাতকে আটকে রাখতে সক্ষম হয় পুলিশ।

আনসার আল ইসলাম কাটআউট পদ্ধতিতে তাদের অপারেশনগুলো সম্পন্ন করে। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে। ছিনতাইয়ের বিষয়টি চার জঙ্গিই জানত।

ওই চার জঙ্গিকে একসঙ্গে আনা কিংবা একসঙ্গে হ্যান্ডকাফ পরানোর বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কারো অবহেলা বা গাফিলতি রয়েছে কি না এগুলো যাচাইয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা শুধু অপারেশনাল বিষয়গুলো দেখছি।

জামিনে থাকা জঙ্গিদের মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের মনিটরিং করি। তারা ঘরে বসেও গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে কাজটি করতে পারে। আমরা কিছুদিন আগে দুই ডাক্তারকে ধরেছি, যারা প্রাত্যহিক স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেই বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

জামিনে থাকা জঙ্গিরা হুমকি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিস্ক অবশ্যই রয়েছে। রিস্কটা মাথায় রেখেই আমরা তাদের মনিটরিং অব্যাহত রাখি।

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আনসার আল ইসলাম সবচেয়ে বেশি কাটআউট সিস্টেম ফলো করে। এটা ব্রেকডাউন করতে একটু সময় লাগে, একটু সময় দিন। জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ অনেক জটিল বিষয়। এটাকে সাধারণ অপরাধ বা খুনের সঙ্গে মেলালে হবে না। ৫-১০ দিনের বিষয় এখানে অবান্তর।

মেজর জিয়ার অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অবস্থান জানলে গ্রেপ্তার করব। অবস্থান জানা মাত্র অভিযান পরিচালনা করা হবে। তার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। অমিকে রিমান্ডে এনে এটাও জানার চেষ্টা করব। এছাড়া ঘটনার সময় বাইরে কারা ছিল, ভেতরে কোনো প্রস্তুতি ছিল কি না অথবা যত ধরনের প্রশ্ন সামনে আসে এর সবই আমরা জানার চেষ্টা করব।

এমএসি/জেডএস