প্রশাসনে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করছেন নারীরা। সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী পদে প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাদের অংশগ্রহণ। বর্তমানে সচিব ও সমমর্যাদায় কর্মরত ১১, জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে ১০ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ১৪৯ জন নারী কর্মরত আছেন।

দেশের সর্ববৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রধান নারী। পাশাপাশি সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা এবং উপনেতাও নারী। রাজনীতির মতোই বর্তমানে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনেও নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনে নারীদের অংশগ্রহণ কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই প্রশাসনে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ সমান সমান হবে। অথচ একসময় প্রশাসন ক্যাডারে নারীদের সুযোগ ছিল না। মেধাসহ সার্বিক যোগ্যতা দিয়ে সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছেন নারী কর্মকর্তারা। এখন শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তাদের উপস্থিতি সরব।

সচিব ও সমমর্যাদায় ১১ নারী 
সচিব ও সমমর্যাদায় মোট ১১ নারী কর্মরত আছেন। তারা হলেন- বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছা. নাজমানারা খানুম, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) বদরুন নেছা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

এ তালিকায় আরও রয়েছেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) বেগম সুলতানা আফরোজ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) মোছা. নাসিমা বেগম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম মাহফুজা আখতার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) শরিফা খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হামিদা বেগম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জুয়েনা আজিজ।  

বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি খাদ্য সচিব ড. মোছা. নাজমানারা খানুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রশাসনে নারীরা তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। তবে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সরকারকে আরও বেশি কাজ করতে হবে।

১০ জেলা সামলাচ্ছেন নারী
দেশে বর্তমানে ১০টি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে কর্মরত আছেন ১০ জন নারী। তারা হলেন-নরসিংদীতে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, গোপালগঞ্জে শাহিদা সুলতানা, রাজবাড়ীতে দিলসাদ বেগম, শেরপুরে আনার কলি মাহবুব, পঞ্চগড়ে সাবিনা ইয়াসমিন, চাঁদপুরে অঞ্জনা খান মজলিশ, বান্দরবানে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, মাদারীপুরে ড. রহিমা খাতুন, জামালপুরে মুর্শেদা জামান ও হবিগঞ্জে ইছরাত জাহান।

পঞ্চগড় জেলার ডিসি সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরুষ আর নারী একে অপরের পরিপূরক। আমরা সমানভাবেই কাজ করছি। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন করছে। ডিসিসহ মাঠ পর্যায়ে অনেক নারী কাজ করছেন। আগে এসব পদে নারীরা কম এলেও এখন তাদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। 
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস বলেন, নিজেকে কখনো নারী হিসেবে চিন্তা করিনি, সবসময় চিন্তা করেছি একজন সরকারি ও প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে। আমার কাছে মনে হয় একজন অফিসারকে অফিসার হিসেবেই দেখা উচিত। পুরুষ কিংবা নারী, সেটা দেখার বিষয় নয়। তিনি কেমন কাজ করছেন, সেটিই দেখার বিষয়।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের ক্ষমতায়নকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের সব নারী সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারছে। এক সময় নারী সম্পর্কে মানুষের মনে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল, আমার কাছে মনে হয় না এখন সেই ধারণা আছে। তাই কর্মক্ষেত্রে আমার কোনো সমস্যা হয়নি বা হচ্ছেও না।

১৪৯ উপজেলার দায়িত্বে নারী
ইউএনও হিসেবে দেশে বর্তমানে মোট ১৪৯ জন নারী কাজ করছেন। কর্মক্ষেত্রে তারা মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। নিজের কাজের বাইরে অনেক মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন।

রূপগঞ্জের ইউএনও শাহ্ নুসরাত জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রশাসনে ইতোমধ্যে নারীদের অবস্থান তৈরি হয়ে গেছে। তাই কর্মক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না।

এছাড়া গ্রেড-১ পদে দুজন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদে ৭ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে ৩৮ জনসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৫৩ জন নারী কর্মরত আছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমান সম্মান ও যোগ্যতা নিয়ে কাজ করছে না। দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। নারীরা বেশি সুযোগ পায় না, তাদের যদি সমান সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে যেতে পারবে।
 
এসএইচআর/এসকেডি/এমএমজে