স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেছেন, চিকিৎসকরা খুবই ব্যয়বহুল শিক্ষা নিয়েছেন। পাশের দেশে একজনকে চিকিৎসক হতে হলে এক কোটির বেশি রুপি খরচ হয়। যারা সরকারি কলেজে লেখাপড়া করেছেন, কত টাকা ব্যয় করেছেন? এ জিনিসগুলো মাথায় রাখতে হবে। জনগণের টাকায় লেখাপড়া করেছেন এখন আপনাদের তা পরিশোধের সময়। এখন বাংলাদেশকে দেওয়ার সময় এসেছে।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে ১০৬ চিকিৎসক কর্মকর্তার যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া এসব চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কর্মস্থলে গেলে সবকিছু মনমতো হবে না। কাজেই নিজের অবস্থান নিজেকেই তৈরি করতে হবে। আমরা চাই দরিদ্র মানুষ যারা আছেন, তাদের আপনারা একটু ভালো সেবা দেবেন। এর চেয়ে ভালো সেবা দেওয়ার সুযোগ আর নেই। সবচেয়ে উত্তম ধর্ম, উত্তম ইবাদত হচ্ছে মানুষের সেবা। সবাই মানুষের সেবা করেন, কিন্তু চিকিৎসকদের মতো কেউ পারেন না। দুই জায়গায় শপথ নিতে হয়, একটি চিকিৎসকদের আরেকটি আইন প্রণেতাদের। আমরা শপথ ভাঙতে চাই না। 

মন্ত্রী বলেন, একজন চিকিৎসক কেবল একজন চিকিৎসকই নন, তিনি একজন নেতাও। একটি প্রতিষ্ঠানকে আপনারা পরিচালনা করবেন। কাজেই আপনাদের নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকতে হবে। সেখানে আপনাদের অধস্তনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। রোগীদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। একজন চিকিৎসক ভালো কথা বললে রোগীদের মন ভালো হয়ে যায়। আমাদের যাদের বয়স বেশি, তাদের মনও ভালো হয়ে যায়। যখন কেউ জিজ্ঞাসা করেন, আজ আপনি এত খাচ্ছেন কেন? তখন বলি চিকিৎসক বলেছেন আমি ভালো আছি। চিকিৎসক ভালো বলায় সমানে খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আর চিকিৎসক খারাপ বললে মন খারাপ হয়ে যায়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে যেমন যন্ত্রপাতি আছে, তেমনি প্রতিটি হাসপাতালের অবকাঠামো খুব সুন্দর হয়েছে।  এখন কেবল চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। 

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন এক ব্যক্তি তার মুমূর্ষু বাবা কিংবা মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, কিন্তু গিয়ে দেখেন চিকিৎসক নেই। তখন তার মনের অবস্থা কী হবে? আর যাওয়ার পর যদি ওই মুমূর্ষু বাবা কিংবা মা মারা যান, তাহলে তার মনের অবস্থা কী হবে? তখন আপনাদের আমরা কীভাবে নিরাপত্তা দেব? 

সদ্য নিয়োগ পাওয়া এক চিকিৎসকের নিরাপত্তা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি অর্জন করতে হবে। অনেকেই কাজ করি। কিন্তু চিকিৎসকদের কাজটা খুবই স্পর্শকাতর। নিরাপত্তা অবশ্যই দরকার, কিন্তু আমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি না, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। 

তিনি বলেন, এখন গ্রাম-গঞ্জেও পাকা রাস্তা, ইন্টারনেটসহ সব সুবিধা আছে। সবকিছুই আছে, কেবল মনটাকে ঠিক করতে হবে। কাজেই আমরা আশা করি, আপনারা রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। প্রধানমন্ত্রীও সেই কথা বলেন। তিনি চিকিৎসকদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। অনেক উন্নয়ন হয়েছে, চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে দামি ও অসাধারণ যন্ত্রপাতি পড়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যত্নের অভাবে এগুলো নষ্ট হয়ে থাকে। তা ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে এসব যন্ত্রপাতি ১০ বছর চললে, সরকারি হাসপাতালে তা দুই বছরও চলে না। এটির ব্যাখ্যা কী? অঙ্গীকার ও সততার অভাব। 

এসএইচআর/এসকেডি