সদিচ্ছা শুধু কাগজে কলমে থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় না বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

দুর্নীতি রুখতে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনা, দুর্নীতি প্রতিরোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ও সমগ্র সমাজকে রুখে দাড়াতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন কোনো দেশ নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না। সব দেশেই কম-বেশি দুর্নীতি হয়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটার ব্যাপ্তি ও প্রভাব বেশি। দুর্নীতি প্রতিরোধে সফল হতে হলে মূলত চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এই সদিচ্ছা শুধু কাগজে কলমে হলে হবে না। এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। কাউকে ভয় ও পরোয়া না করে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নানা ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের খুব বেশি পদক্ষেপ দেখা যায় না। আরেকটি বিষয় হলো যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তৃতীয়টি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব পালন করছে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে। সর্বশেষ বা চতুর্থ বিষয় হলো— দুর্নীতির বিরুদ্ধে পুরো সমাজকে রুখে দাঁড়ানো।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। দুর্নীতি প্রতিরোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা বাড়াতে হবে। সেটা রাষ্ট্রই নিশ্চিত করবে।

সভায় ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে ডেটা সাংবাদিকতা : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। যেখানে বলা হয়, ক্ষমতাশালীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন, কর ফাঁকি ও পাচার, জটিল নেটওয়ার্ক উন্মোচনে ডেটা সাংবাদিকতা নতুন পথ দেখিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ সাংবাদিকেরই ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি।

প্রবন্ধে বলা হয়, ডেটা উন্মুক্ত করতে সরকার কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, কি ধরনের আইনি কাঠামো ও পরিবেশ ব্যবহার করছে তা পরিমাপে গ্লোবাল ডেটা ব্যারোমিটারের সূচক জনপ্রিয়। ডেটা ব্যারোমিটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৩ দশমিক ৮ পেয়েছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গড় স্কোর ৩২ দশমিক ৭৯ থেকে বেশ কম। প্রাপ্যতা, সক্ষমতা, ব্যবহার ও ফলাফল, উন্মুক্ত ডেটা নীতি— এসব মানদণ্ড ব্যবহার করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।

সভায় আরও বক্তব্য দেন টিআইবির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্টের পরামর্শক সুমাইয়া খায়ের, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন ও ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হেল্প ডেস্কের প্রধান বদরুদ্দোজা বাবু। সভায় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম।

অনুষ্ঠানে ২০২২ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন— প্রিন্ট বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান। আঞ্চলিক পর্যায়ে টিআইবির এ পুরস্কার পান খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চলের নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল হাসান এবং টেলিভিশন মিডিয়াতে যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন দলের এডিটর অপূর্ব আলাউদ্দিন। প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইট।

আরএম/এসএসএইচ/