অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপি ৭ মার্চ পালন করছে: তথ্যমন্ত্রী
ড. হাছান মাহমুদ
একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি ৭ মার্চ পালন করেছে। আপনাদেরকে অনুরোধ জানাবো যে, এতোদিন ধরে যে ইতিহাস বিকৃতি করেছেন সেটার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান। আর নতুন করে ইতিহাস বিকৃতির জন্য কোনো দিবস পালনের ভণ্ডামি দয়া করে করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অনন্য দিকগুলো তুলে ধরেন।
বিজ্ঞাপন
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি যখন ঘোষণা দিলো যে তারা ৭ মার্চ পালন করবে, আমি আশা করেছিলাম ইতিহাসকে মেনে নেওয়ার শর্তে ও এতোদিন ধরে যে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছে, সেই কলঙ্ক মোচনের স্বার্থে তারা ৭ মার্চ পালন করবে। কিন্তু ৭ মার্চ পালন করতে গিয়ে যে বক্তব্য তারা দিয়েছেন, তা বরং ৭ মার্চের বক্তব্যের সারমর্মকে খাটো করার জন্যই। অর্থাৎ একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা ৭ মার্চ পালন করেছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য মিছিল করতে করতে রাস্তায় বেরিয়ে গেল। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলো। অথচ বিএনপি নেতারা বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখলেন। আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো, এ ধরনের কটাক্ষ করার উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা এসব দিবস পালন করবেন না।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি ক্রমাগতভাবে ইতিহাস বিকৃত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ৭ মার্চের ভাষণ ২১ বছর বাজাতে দেননি। বিএনপি ও এরশাদ সাহেব যতদিন ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশের রেডিও টেলিভিশনে ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল, বাজাতে দেয়নি। কিন্তু আজ এই ভাষণকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের দলিল হিসেবে এই ভাষণ স্থান পেয়েছে।
স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের জন্য যদি কৃতিত্ব দিতে হয় তাহলে নূরুল হকের কৃতিত্ব জিয়াউর রহমানের চেয়ে অনেক বেশি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ অফিসের প্রয়াত বেয়ারার নূরুল হক। তিনি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি রিক্সা করে সমগ্র চট্টগ্রাম শহরে মাইকিং করেছিলেন। চট্টগ্রাম শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তখন হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে তার বুকে গুলি হতে পারে সেটা জেনেও সেদিনকার তরুণ নূরুল হক মানুষকে ঘোষণাটি শুনিয়েছিলেন। আর ২৬ মার্চ সকাল থেকে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান স্বাধীন বাংলা বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। আর জিয়াউর রহমান পাঠ করেছিল ২৭ মার্চ। স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করার জন্য যদি কাউকে বাহবা দিতে হয়, চার দেয়ালের মধ্য থেকে পাঠকারী জিয়াউর রহমানের চেয়ে নিজের জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মাইকিং করা নূরুল হকের কৃতিত্ব অনেক বেশি। বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো এই সত্যগুলো মেনে নেয়ার। স্কুলের দপ্তরিকে হেডমাস্টার বানানোর চেষ্টা করবেন না, ইতিহাসকে মেনে নিয়েই রাজনীতিটা করুন। ক্রমাগতভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করবেন না।
ঢাকা মহানগর শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি কে এম শহিদ উল্যার সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, নাজমুল হক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব মো. মাসুদ করিমসহ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সভাশেষে শিক্ষার্থীদের হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটি তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।
এইউএ/ওএফ