পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে যুবসমাজ সম্ভাবনাময় শক্তি। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পারলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। এজন্য তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের একত্রে কাজ করতে হবে।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে ‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২ : যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলা থেকে চার শতাধিক তরুণ প্রতিনিধি অংশ নেন।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বর্তমান গড় বয়স ৩৮ বছর। কর্মক্ষম এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে ‘জনসংখ্যার বোনাস’ এর সুযোগ নিতে হবে। ২০৩৬ সাল থেকে এই বোনাস কমতে থাকবে। সরকার ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেই তরুণদের কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়েছে। মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ভালো করেছিল উল্লেখ করে ড. শামসুল আলম বলেন, এমডিজির ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এসেছে। এসডিজি একটি সামাজিক আন্দোলন। এই এসডিজি বাস্তবায়নে যুবসমাজ সম্ভাবনাময় শক্তি। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পারলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে।

অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস বলেন, কর্মসংস্থানে বাংলাদেশ পিছিয়ে। শোভন কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। তরুণদের উন্নয়নের ধারায় যুক্ত করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে ইউএনডিপি। সমাজের সব শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই শুধু উন্নয়নকে টেকসই করা সম্ভব।

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নুয়েন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। দেশের তরুণদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে মেয়েরা কর্মসংস্থানের বাইরে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণ নেতৃত্ব ও তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্য সাজেদা সাথী অংশ নেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, শুরুতে গ্রামের মানুষ মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতেন। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মেয়েদের সুযোগ দিতে হবে।

উন্নয়নের ধারায় নারীকে যুক্ত করা না গেলে এসডিজি অর্জন কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন ইউএনডিপির প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা ফকরুল আহসান। তিনি বলেন, এসডিজি প্রচারাভিযানে নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি মানেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও ভালো আছে, এটা ভাবলে ভুল হবে।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে পরিবেশদূষণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈষম্য, বেকারত্বের মতো বেশ কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। সুশাসনের সমস্যা রয়েছে, দুর্নীতি আছে, রাজনীতিতেও সংকট রয়েছে। ধীরে ধীরে এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। আর এক্ষেত্রে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপির এসসিফোরএসডিজি প্রকল্প সহযোগী ফারহানা রাজ্জাক ও বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক।

এসআর/এসএসএইচ/