হালকা প্রকৌশল শিল্প এবং মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়নে সরকার নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন করবে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম। বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) মোটরসাইকেল শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ উন্নয়ন প্রেক্ষিত ওয়েবিনারে এ কথা জানান তি‌নি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপ‌স্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি’র সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সেলিম উদ্দিন ও এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম।

মূল প্রবন্ধে বিটাক’র পরিচালক ড. সৈয়দ এহসানুল করিম বলেন, দেশে ২১শ কোটি টাকার মোটরসাইকেলের বাজারের মধ্যে দেশীয় শিল্পের দখলে মাত্র ২০ কোটি টাকার বাজার। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হলে মাত্র ৫ থেকে ৭ বছরে ২১শ কোটি টাকার পুরোটাই দেশীয় শিল্পের দখলে আনা সম্ভব।

শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই সবাইকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পের নীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং সহায়তা করতে চায় সরকার। হালকা প্রকৌশল শিল্পকে গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পকে ২০২০ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দেশের শিল্পখাতের বিকাশে সরকারের এই ঘোষণা ও বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বলেন, শুল্ক ও আমদানি পর্যায়ে সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মোটরসাইকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। শিল্প ও বাণিজ্যখাতকে ন্যায়সঙ্গত সব ধরনের নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

বিটাক মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, মোটরসাইকেল শিল্পে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বিটাক। এর ফলে এই খাতের কারিগরি সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের প্রয়োজনীয় হালকা প্রকৌশল খাতের ৭০ হাজার কোটি টাকার পণ্যের চাহিদার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ দেশীয় শিল্পসমূহ সরবরাহ করে থাকে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের মোটরসাইকেলের বাজার দ্বিগুণেরও বেশি বাড়তে পারে। তাই এই খাতের বিভিন্ন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দেশের শিল্পায়নকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে উদীয়মান বৃহৎ শিল্পসমূহের মধ্যে মোটরসাইকেল অন্যতম। দেশে ৭টি স্থানীয় ও ৮টি আন্তর্জাতিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৩৮টি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ শিল্পের বার্ষিক উৎপাদন আনুমানিক ৪ লাখ ৪০ হাজার ইউনিট, যা মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ।

এ শিল্পের উন্নয়নে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এখনও এ শিল্পের অধিকাংশ উপকরণ যেমন- মোটরসাইকেল চেসিস, চাকা, হ্যান্ডেল বার, ব্রেক সিস্টেম, ফুয়েল ট্যাংক, প্লাস্টিকের পণ্য (মাড গার্ড, ফেন্ডার, সাইড কভার) ইত্যাদি বিদেশ থেকে আমাদনি করতে হয়।

দেশীয়ভাবে এসব উপকরণ উৎপাদন সম্ভব হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ও বিপণন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।


এসআই/টিএম