সাধারণ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হওয়ার পর এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ট্রেন উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি) স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। এসব ট্রেন থেকে কয়েকশো যাত্রী আগারগাঁওয়ে নেমেছেন। কিন্তু স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত শাটল বাস সার্ভিস খুঁজে পাচ্ছেন না। অন্যদিকে বাস কাউন্টারে ২০টি বাস অপেক্ষা করলেও সেখানে মেট্রোরেলের কোনো যাত্রীর দেখা নেই।   

এর কারণ হলো- আগারগাঁও স্টেশনে মূলত ৪টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে। এসব পথের মধ্যে এ ও বি গেট ফার্মগেটমুখি সড়কে এবং সি ও ডি গেট মিরপুরমুখি সড়কে নেমেছে। এসবের মধ্যে আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল রুটের বাসগুলোর জন্য বি গেটের সামনে কাউন্টার বসিয়েছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এই গেট বন্ধ রাখে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

যাত্রীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তে আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে উল্টো কথা। কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

আরও পড়ুন >>> মেট্রোরেলে আসুক যোগাযোগের স্বাধীনতা 

সকাল ৯টার দিকে ১০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম শাটল বাস আগারগাঁও স্টেশন ছেড়ে যায়। তবে সে বাসে মেট্রোরেলের কোনো যাত্রী ছিল না।

উত্তরা থেকে আসা মেট্রোরেলের যাত্রী শাহরিয়ার হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের শুধুমাত্র একটি গেট দিয়ে বের হতে দিয়েছে। বের হয়ে দেখলাম আইডিবি ভবনের কোনায় মিরপুরমুখি সড়কে নেমেছি। কিন্তু এখানে কোন বিআরটিসির বাস নেই। আমরা তো জানতাম বিআরটিসির বাস আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু বাস কোথায়?

আগারগাঁওয়ে দ্বায়িত্বরত বিআরটিসির কল্যাণপুর ডিপোর কন্ডাক্টর শয়ন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকাল সাড়ে ৬টা থেকে এখানে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। অথচ যে গেটের সামনে বাস রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেই গেটটি বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আমরা তো ভেবেছি এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেন আসেনি, তাই কোনো যাত্রী নামছে না। কিন্তু পরে জানলাম কর্তৃপক্ষ গেটটি বন্ধ রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে, তাদের যাত্রীগুলোকে আমরা নির্বিঘ্নে মতিঝিল পৌঁছে দেব। কিন্তু তাদের ভুলে এই যে দেড় ঘণ্টা সময় অপেক্ষা করতে হলো, এটি আমাদের জন্য ক্ষতি ও ভোগান্তির। অন্য রাস্তায় ২০টি বাস দেড় ঘণ্টা সময় যে টাকা ইনকাম করতো, সেই রাজস্ব হারালো সরকার।

গেট বন্ধ প্রসঙ্গে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) বক্তব্য জানতে চাইলে আগারগাঁও স্টেশনে থাকা ডিএমটিসিএলের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তারা শুধু একটা কথাই বলেছেন, আজ  আমাদের কোনো কথা নেই।

পরে ডিএমটিসিএলের এমআরটি লাইন-৬ সংক্রান্ত প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পুলিশ ভুল করে ওই গেটটি বন্ধ করে রেখেছে। আমরা সাড়ে ৯টার পরে ওই গেটটি খুলে দিয়েছি।

আরও পড়ুন >>> মেট্রোরেল অর্থনীতির নতুন জাগরণ 

এদিকে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে দশ জন যাত্রী নিয়ে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে আগারগাঁও থেকে‌ মেট্রোরেল শাটল বাস সার্ভিসের প্রথম বাস ছেড়ে যায়। তবে ওই বাসে মেট্রোরেলের কোনো যাত্রী ছিল না।

আগারগাঁও স্টেশন ছেড়ে যাওয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) প্রথম বাসটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৬১৪৮। বাসটি চালান মিরপুর ১২ নম্বর বাস ডিপোর চালক মো. নজরুল ইসলাম।  

এর আগে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কাজীপাড়া থেকে আগারগাঁওমুখি রোডে বিআরটিসির বেশ কয়েকটি বাস প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। বাসগুলো পুরাতন হলেও ধুয়ে মুছে সেগুলোকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্বিতলবিশিষ্ট বাসগুলোতে মোট ৭৫টি আসন রয়েছে। আর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের বি গেটের মুখেই রয়েছে আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল রুটের শাটল বাস সার্ভিসের কাউন্টার। বাসের সর্বোচ্চ ভাড়া ৩০ টাকা (মতিঝিল) এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।

বাস চালক মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন একটি নতুন সার্ভিসের যুক্ত হতে পেরে ভালো লাগছে। নিশ্চয়ই এই সার্ভিসটি যাত্রীদেরও ভালো লাগবে। এর মধ্য দিয়ে নতুনদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

এ প্রসঙ্গে আগারগাঁও স্টেশনে দায়িত্বরত বিআরটিসির কল্যাণপুর বাস ডিপোর ট্রাফিক ইনচার্জ মো. নাদিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেট্রোরেল বাস সার্ভিসের আওতায় এই মুহূর্তে আমরা ৩০টি বাস প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের আগারগাঁও প্রান্তে ২০টি এবং উত্তরা দিয়াবাড়ি প্রান্তে ১০টি বাস রাখা হয়েছে। চাহিদা অনুসারে বাসের সংখ্যা বাড়ানো বা কমানো হবে। আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

এমএইচএন/এমজে/এনএফ