মেট্রোরেলে সেলফি তুলছেন এক যাত্রী/ ঢাকা পোস্ট

অপেক্ষা ছিল মেট্রোরেল উদ্বোধনের। সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে গতকাল। আজ (বৃহস্পতিবার) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত স্বপ্নের মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পেরেছেন যাত্রীরা।

প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে উঠতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে উৎসুক যাত্রীদের। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার পর বগিতে ওঠার সুযোগ মিলতেই মুহূর্তটিকে ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছেন সবাই। 

গতকাল (বুধবার) মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মাধ্যমে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থার নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। এরপর আজ সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল।

আগারগাঁও ও উত্তরা উত্তর স্টেশনে শীতের সকালে ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই ছিল মানুষের লম্বা লাইন। প্রথম দিনেই এত মানুষের ভিড়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। অবকাঠামোয় যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য স্টেশনে ধীর গতিতে যাত্রী ঢুকিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে স্টেশনের বাইরে অপেক্ষমান যাত্রীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে।

অনেকক্ষণ পর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, স্বপ্ন ছোঁয়ার লগ্ন, মেট্রোরেলে প্রথমবার পা রাখা। সেই ক্ষণের সাক্ষী হতে কেউ এসেছিলে পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধু বান্ধব ও প্রিয়জন নিয়ে।

কারও কারও হাত ধরেছিল পরিবারের ছোট্ট শিশুটিও। যে যার সঙ্গে যেভাবেই আসুক না কেন, মেট্রোরেলে ওঠার পর সেলফি, ছবি, ভিডিও করতে ভুল করেননি কেউ। সবাই যার যার মতো নিয়েছেন সেলফি, এমনকি সহযাত্রীদের সঙ্গেও ছবি তুলেছেন অনেকে। স্মৃতির পাতায় এসব ছবি ধারণ করে রাখতে ক্যামেরাবন্দির পাশাপাশি মুহূর্তেই সবাইকে ছবিগুলো পোস্ট করতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

উত্তরা উত্তর স্টেশনে দুপুর ১২টার শেষ ট্রেনেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্টেশন ও কাউন্টার থেকে প্ল্যাটফর্ম হয়ে মেট্রোরেলের ভেতরটা- সবখানেই ছিল মানুষ আর মানুষ। তবে তারা কাজে বের হওয়া যাত্রী নন, অধিকাংশই এসেছেন স্বপ্নের মেট্রোরেলে ওঠার তৃপ্তি মেটাতে। স্টেশন ও ট্রেন ঘুরে দেখা গেছে, সব যাত্রীই মেট্রোরেলের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

উত্তরা উত্তর স্টেশনে স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করা স্কাউট সদস্য তানভির আহমেদ বলেন, আজ যত মানুষ স্টেশনে এসেছেন সবাই ছবি তুলেছেন। পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে মেট্রোরেলে চড়ে ছবি ও সেলফি তুলেছেন তারা। আমাদের সঙ্গেও অনেকে সেলফি তুলেছেন। এটা একটা আনন্দ, যে আনন্দে সবাই শামিল হচ্ছেন।

প্রথম দিনের শেষ ট্রেনে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারওগাঁও যাচ্ছিলেন সৌখিন যাত্রী এহসানুল বারি। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বন্ধুরা মিলে মেট্রোরেলে প্রথম যাত্রা করতে এসেছেন। 

তিনি বলেন, বন্ধুরা মিলে ভোরের দিকে স্টেশনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। পরে স্টেশনে ঢুকে টিকিট নিয়ে মেট্রোরেলে চড়েছি। যার প্রতিটি ধাপের ছবি তুলেছি, সেলফি নিয়েছি। ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছি। এটা এক অন্যরকমের ভালো লাগা। এমন কোনো মানুষ বা যাত্রী নেই যারা সেলফি বা ছবি তুলছেন না। আমরাও আমাদের নিজেদের ভরপুর ছবি তুলে ফেললাম।

প্রথম দিনে মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে খুব সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে সেই লাইন স্টেশনের সামনে থেকে এঁকেবেঁকে অনেক দূরে গিয়ে ঠেকে। যেখানে হাজারো মানুষ লাইনে ছিলেন। কিন্তু প্রথম দিনে বেশিরভাগেরই মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ হয়নি। শেষে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন তারা।

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। গতকাল উদ্বোধন হয়েছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। আপাতত মধ্যবর্তী স্টেশনে কোনো স্টপেজ ছাড়াই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল।  

প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছয় বগিবিশিষ্ট ১০ সেট ট্রেন চলাচল করবে। আপাতত এই রুটে ধীরগতিতে ট্রেন চলবে। এ পর্যায়ে ট্রেন চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। পরে চলাচলের সময় বাড়ানো হবে এবং চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। মেট্রোরেল পুরোপুরি চলাচল শুরু হলে সাড়ে তিন মিনিট অন্তর অন্তর একটি ট্রেন চলবে।

এএসএস/কেএ/জেএস