পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর মধ্যে অন্যতম রেলওয়ে পুলিশ। এ ইউনিটের কার্যক্রম চলছে অধিকাংশ পুরোনো অবকাঠামোয়। রয়েছে অনেকগুলো জরাজীর্ণ থানা ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ সত্ত্বেও সেখানেই চালাতে হচ্ছে থানার কার্যক্রম। এ অবস্থায় বড় দুর্ঘটনার ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করে এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেলওয়ে থানা পুলিশের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩-এর দ্বিতীয় দিনে বুধবার (৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সেখানে এ দাবি উত্থাপন করা হয়।

এর আগে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। বৈঠকে ঊর্ধ্বতন ১১ জন পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন বিষয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন। সেখানে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সভায় অংশ নেওয়া রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি শাহআলম প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলে বলেন, রেলওয়ে পুলিশের অনেকগুলো জরাজীর্ণ থানা রয়েছে। সেসব ঝুঁকিপূর্ণ থানাতেই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। যেকোনো সময় অনেক বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের বাজেট থেকেই এসব থানার ভবন নির্মাণ করার অনুমতি চান তিনি।

তার প্রস্তাবের বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি লিখিতভাবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

একই বৈঠকে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য বলা হয়েছে। আমরা সেটা অনুসরণ করছি। তবে জ্বালানি তেল এবং টিএডিএ কমিয়ে আনলে অপারেশনাল কাজে প্রভাব পড়বে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দাবি লিখিতভাবে জমা দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জেন্ডার সেনসেটিভিটি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি আমেনা বেগম। তিনি বলেন, সারদাসহ বিভিন্ন ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে প্রশিক্ষণরত পুলিশ সদস্যদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অব্যাহত রাখা প্রস্তাব দেন তিনি।

সারাদেশে মাত্র দুজন নারী জেলা পুলিশ সুপার কাজ করছেন। তারা যথেষ্ট সাফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে মাঠ পর্যায়ে নারী পুলিশ কর্মকর্তা বাড়ানোর দাবি জানান গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা।

এর বাইরে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান, র‌্যাব মহাপরিচালক খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, অতিরিক্ত ডিআইজি সামসুন্নাহার, যশোর জেলার এসপি প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার মাহফুজা লিজা।

রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সব ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কেউ আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে, কেউ যেন আর ওই অগ্নিসন্ত্রাস করার সাহস না পায়, মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত করতে না পারে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, আন্দোলন সংগ্রাম করবে, জনগণকে নিয়ে করবে। কিন্তু সেখানে যদি কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে।

আন্দোলনের নামে বেপরোয়া পেট্রলবোমা হামলার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যেন কেউ সেটি করতে না পারে।

দেশের অগ্রযাত্রায় পুলিশের বিরাট ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দুর্যোগ এসেছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, সেগুলো আপনারা কঠোর হাতে দমন করেছেন, জঙ্গিবাদ দমন করেছেন, পাশাপাশি আমাদের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি বলেন, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, এ দায়িত্ব কিন্তু পুলিশ বাহিনীকেই করতে হয়। আসলে পুলিশ বাহিনীর ওপর দায়িত্বটা বেশি।

সরকার প্রধান বলেন, আমি সবাইকে বলব, অগ্রযাত্রা কেউ যেন ব্যাহত করতে না পারে। এটুকুই আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে। দল, মত অনেক কিছু থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ যেন কেউ ধ্বংস করতে না পারে, কোনো কাজে যেন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, কোনো ক্ষেত্রে যেন আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে।

জেইউ/এসএসএইচ/