‘শীতে হুতিবারও পারি না, বইবারও পারি না। শরীরে কাঁপন ওঠে। কাগজ জ্বালিয়ে আগুন পোহাই। কষ্ট, আল্লায়তো মাফায়ও না।’

কথাগুলো বলছিলেন আনোয়ারা বেগম। তিনি হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করছেন রাজধানীর বাংলামোটর বীর উত্তম সি. আর. দত্ত সড়কের ফুটপাতে।

আনোয়ারার মতো আরও অনেকেই বসবাস করছেন এ ফুটপাতে। প্রায় সাত বছর এখানে বসবাস করা ওসিয়তের ভাষ্য, আগের বছরগুলোতে শীত তাদের তেমন কাবু না করতে পারলেও এবার তাদের এখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন>>পঞ্চগড়ে কমছে তাপমাত্রা, খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ

তীব্র শীতেও ফুটপাতে শুয়ে আছেন ছিন্নমূল নারী / ছবি: ঢাকা পোস্ট

ওসিয়ত বলেন, ‘এই রহম শীত আর দেখছি না, খুব কষ্ট। রাইতে বেশি কষ্ট হয়। কাগজ-কাঠ টোকাইয়া রাইতে আগুন পোহাই। কেউ কম্বল-টম্বল দিয়ে সাহায্যও করে না।’

ওসিয়তের সঙ্গে আলাপের পর কয়েক কদম সামনে গিয়ে দেখা যায় ফুটপাতে কাঁথা গায়ে জবুথবু হয়ে শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধা। অসুস্থতার কারণে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। পাশে থাকা মেয়ে পুষ্পা বলেন, ‘মায়ের শরীরডা ভালা না। শীতে অসুস্থ হই গেছে। গরীবের এ দুনিয়ায় কেউ নাই। বাড়ি-ঘর থাইকাও নাই। অন্যের বাসায় কাজ করলে পেটে খাবার জোটে। শীতও আমগো মাইরা ফেইলব মনে হইতাছে।’

আরও পড়ুন>>‘প্রচুর ঠান্ডা, তারপরও জীবিকার তাগিদে বাহির হইছি’

কয়েক দিন ধরে হাড়কাঁপানো শীতে পুরো নগরবাসী কাবু হয়ে পড়েছেন। কুয়াশায় ঢাকা আকাশ আর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হচ্ছে সবাইকে। শীতের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে বসবাস করতে হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষগুলোকে।

শীতের কারণে রিকশা চালানো যায় না কিন্তুু মালিকের জমা মাফ নাই/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

আরও পড়ুন>>মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঢাকায়, ১৭ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ

ভিক্ষা করে পেট চালান অন্ধ আজগর আলী। কয়েক দিনের শীতে তার আয়ে ভাটা পড়েছে। রোজগার কমে যাওয়ায় পেটেও টান পড়েছে তার। পাশাপাশি পাতলা কাঁথায় রাত কাটাতে হচ্ছে আজগরকে। তিনি বলেন, ‘টাকা-পয়সা রোজগার কম। এক বেলা ভাত খাই তো আরেক বেলা মুড়ি বা বিস্কুট দিয়ে চলে। শীতেও খুব কষ্টপাচ্ছি।’

তীব্র শীতে ভালো নেই রিকশা ও ভ্যান চালকরাও। বাংলামোটর, গ্রিন রোড, পান্থপথ ও কলাবাগান এলাকার কয়েকজন রিকশা চালক জানান, শীতের কারণে বাইরে মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। এ কারণে তাদের আয়ও কমে গেছে। তাছাড়া বাতাসের কারণে রিকশা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন>>শীতে কাঁপছে মানতা সম্প্রদায়, মাছ শিকারে যেতে পারছে না ১২ দিন ধরে

শীত বেড়ে যাওয়ায় বাইরে মানুষের আনাগোনা কম/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

মো. ইদ্রিস নামে এক রিকশা চালক বলেন, ‘আগে তো সকাল ছয়টায় বের হইতাম। এখন বের হইতেই ১০টা বাজে। ভাড়াও কম। আর শীতের কারণে রিকশা তেমন চালানো যায় না। কিন্তু মালিকের জমা মাফ নাই।’

ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতে তাদেরও বিক্রি কমে গেছে। আগের মতো ক্রেতা না পাওয়ায় তাদের মন ভালো নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রোববার রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে।

এনআই/এমএ/জেএস