বগুড়ার দুটি আসন থেকে উপ-নির্বাচন অংশগ্রহণের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাতিল করে ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে গিয়ে আপিল করেন হিরো আলম। এর আগে, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তিনি।

রোববার (৮ জানুয়ারি) প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে হিরো আলমের দুটি মনোনয়নপত্রই বাতিল বলে ঘোষণা করেন উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, মোট ভোটারের এক শতাংশ সমর্থকের তালিকা মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় দিতে হয়। সেখানে হিরো আলমের সমর্থকদের সইয়ে কিছু গড়মিল পাওয়া গেছে। ফলে নির্বাচন বিধি অনুযায়ী, তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে হিরো আলম বলেন, কাগজপত্র সহকারে সব জমা দিয়েছি। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে বুঝতে পারব তারা সুষ্ঠু বিচার করল না অবিচার করল। আমি পরিপূর্ণভাবে জমা দিয়েছি। ২০১৮ সালে যখন ভোট করি, একই কারণে কিন্তু আমার প্রার্থিতা বাতিল করেছিল। এবার জানামতে সেই ভুল করিনি। একটা ভুল তারা ধরেছে যে, একটা ভোটারের নাকি নম্বরই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওনারা যে ভুলটা ধরেছেন, ওই নামে আমি কারো নামই জমা দেইনি।

তিনি বলেন, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে আমার মনোনয়ন বাতিল করলে পরে হাইকোর্ট থেকে তা ফিরে পেয়েছিলাম। সেবার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে এতকিছু করার পরও প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছিল। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। শেষপর্যন্ত আইনের প্রতি বিশ্বাস ছিল। পরে হাইকোর্ট প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিলো। সেই নির্বাচনে মারামারির কারণে দুপুরে ভোট বর্জন করি। ওখানে বগুড়া সদর ও কাহালুর দুইটা আসনেই শুধু আমার না মোট ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। আমার নামে কোনো মামলা বলেন, ঋণ খেলাপি বলেন, আইনের অন্য কোনো দোষ কিন্তু ধরতে পারেনি। কোনটা দোষ সেটা খুঁজে বের করতে পারেনি। বের করছে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে ভুল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে তো আমাকে বাইরে রাখবে না। আমি বাইরে কেন? এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট, গুজব। আমার সম্মান নষ্ট করার জন্য কিছু লোক এই সমস্ত অপপ্রচার চালাচ্ছে। ষড়যন্ত্র যদি নাই হবে তাহলে একটা আসনে তো পেতাম (প্রার্থিতা)। দুইটা আসন থেকে কেন বাতিল করা হবে? এর পেছনে যেকোনো কারণ থাকতে পারে। এই মুহূর্তে কারা ষড়যন্ত্র করছে আমরা বলব না। ভোটের মাঠে যাব তারপর আপনারাই বলতে পারবেন। কেউ যদি বাধা দেয় সবাই জানতে পারে। আমরাও পরবর্তীতে সব তুলে ধরব।

কোন জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে দুটো আসনে মনোনয়নপত্র তুলছেন এমন প্রশ্নে হিরো আলম বলেন, যখন আমি ভাইরাল ছিলাম না, তার আগে দুইবার ইউপি নির্বাচন করি। তারপর এলাকার লোকজনের দাবি জানায়, এবার বগুড়া সদর থেকে নির্বাচন করতে হবে। আগে যেহেতু কাহালুর থেকে নির্বাচন করেছিলাম, তাই সেখান থেকে আবার নমিনেশন নিয়েছি। প্রতিটা মানুষের নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে। আমার এবারও নির্বাচন করার লক্ষ্য আছে। একবার না পারিলে দেখ শতবার। এমন না যে ৫০ বছর বয়স হয়ে গেছে আমি নির্বাচন করতে পারব না। যেহেতু জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে নেমেছি, দেখি শেষপর্যন্ত কতটা করতে পারি। অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে আমি জয়লাভ করব। ১৮ সালের নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হয়নি। আমার এলাকায় আমি এটা দেখিনি। অন্য কোথাও হয়েছে কিনা আমি জানি না, এটা আপনারা বলতে পারবেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু বিষয় থাকে যে তিলকে তাল বানানো হয়। আমার হয়তো সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার কথা ২০ লাখ, ওরা হয়তো ৫০ লাখ করে দিয়েছে। লিখতে তো আর সমস্যা হয় না, বলতেও সমস্যা হয় না। ঘাটাঘাটি করতে হবে আমার সত্যিই কোটি কোটি টাকা আছে কি না। এটা তো আমি চাইলেও লুকিয়ে রাখতে পারব না। আমার যদি কোটি কোটি টাকা থাকে, এতো সম্পদ থেকে থাকে, তাহলে দুদক অবশ্যই খুঁজে দেখবে আমার এতো কিছু আছে কিনা। সম্পদের পরিমাণ বলতে আমার কিছু ধানি জমি আছে। নতুন একটা বাড়ি করছি। আর একটা গাড়ি আছে। সম্পদের পরিমাণ আর কতই হবে। গ্রাম-গঞ্জে জমির দাম আর কত হবে, পাঁচ লাখ টাকার কথা বলেছি, কিন্তু উকিল শূন্য একটা বেশি বসিয়ে দিয়েছে। উকিলের ভুলে সম্পদ বেড়ে গেছে। এটা আপনারা নিউজ করেছেন। এখন খুঁজে তো দেখতে হবে আমার এতো টাকা আছে কিনা।

এসআর/কেএ