সালানা ওরছে গাউছুল আজমে মুসল্লির ঢল
ইসলাম আল্লাহর দেওয়া একমাত্র জীবন বিধান। ইসলামের সুমহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসুল এসেছেন। নবুয়তের পরিসমাপ্তির পর সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আল্লাহর অলিগণ। তারই ধারাবাহিকতায় খলিফায়ে রাসুল হজরত গাউছুল আজম (রা.) সেই পথে আজীবন আহ্বান করে গেছেন শরীয়তের বিধিবিধানের ওপর অটল ও অবিচল থেকে সুন্নতে রাসুলকে প্রতিষ্ঠার জন্য নজিরবিহীন শ্রম ও ত্যাগ দিয়েছেন। নবীজির মুহাব্বতে নিজেকে এমনভাবে উৎসর্গ করেছেন, এখলাসের সঙ্গে এক এক করে জীবনে নবীর সব সুন্নত বাস্তবায়ন করেছেন। প্রিয় রাসুল (দ.)ও উনাকে ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ খলিফায়ে রাসুলের মর্যাদা দান করেছেন।
প্রিয় রাসুলের (দ.) ঐতিহাসিক মুজেযা পবিত্র মেরাজ। আল্লাহর সঙ্গে নবীর সশরীরে সাক্ষাতের প্রেমময় মুহূর্ত মেরাজুন্নবীর সময়ে। খলিফায়ে রাসুল হজরত গাউছুল আজমের (রা.) পবিত্র বেছাল শরীফও মেরাজের বরকতময় সময়ে। পবিত্র বেছাল শরীফ স্মরণে আয়োজন করা হয় সালানা ওরশে পাক। এটি এমন এক ওরছে পাক যেখানে শরীয়তের বিন্দু পরিমাণ খেলাপ নেই। গরু-মহিষ টাকা পয়সা নজর নেওয়াজ ইত্যাদি আনার অনুমতি নেই, এখানে আসতে গেলে একটি জিনিস লাগে, সেটি হলো খালেছ অন্তরে আসা। এই ওরছে পাকে অনুষ্ঠিত হয় খতমে কোরআন, খতমে তাহলিল, নফল নামাজ-রোজা, দরূদ শরীফ পড়ার মাধ্যমে। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল এবং খুলুছিয়তের ওপর হজরত গাউছুল আজম (রা.) সারা জীবন কাটিয়েছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ এই মহান ওরছে পাকের আয়োজন।
বিজ্ঞাপন
এখানে দুনিয়াবী লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে এখলাসের সঙ্গে সবকিছু আদায় করা হয় বলে খোদায়ীভাবে স্বীকৃতি মেলে। তাবাররুকের মাংসের টুকরায় অলৌকিকভাবে আল্লাহু নকশা উঠে, যা কবুলিয়তের নিদর্শন। হজরত গাউছুল আজমের ওরছে পাক এমন এবাদত ও এখলাসের জৌলুশে উদযাপিত হয়, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় হজরত গাউছুল আজম (রা.) কত উচ্চ পর্যায়ের মনীষী, প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআন সুন্নাহর প্রতিফলন হয় এই মকবুল ওরশে পাকে। হজরত গাউছুল আজম (রা.) বাংলার জমিনে রয়েছেন, ইনশাআল্লাহ উনার বরকতে চির বরকতময় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। পবিত্র মেরাজুন্নবী (দ.) ও সালানা ওরছে গাউছুল আজম (রা.) এর উসিলায় আমাদের প্রিয় স্বদেশের বুকে আল্লাহর রহমত ও বরকত অহরহ বর্ষিত হোক, করোনা মহামারিসহ সকল প্রকার দুর্যোগ থেকে সকলকে আল্লাহ হেফাজত করুক।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বাদ এশা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের গাউছুল আজম সিটিতে অনুষ্ঠিত কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা খলিফায়ে রাসুল হজরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর স্মরণে ৬৮তম পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) উদযাপন ও সালানা ওরছে হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলে এ মহা মনীষীর একমাত্র খলিফা, মোর্শেদে আজম হজরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সালানা ওরছে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নূর খাঁন, প্রফেসর ড. জালাল আহমদ, হজরতুলহাজ্ব আল্লামা মোহাম্মদ ইসহাক মুনিরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সরোয়ার কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান।
এদিন ফজরের নামাজের পর খতম শরীফ, মোরাকাবা, ঈছালে ছাওয়াব, মিলাদ-কিয়াম ও মুনাজাতের পর খতমে কুরআন আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরছের কর্মসূচি।
পূর্ব ঘোষিত তারিখ থেকে নারী, প্রবাসী, তরিক্বতপন্থী ও উপস্থিত মুসলিম জনতা সর্বমোট ১৩৬৭১টি খতমে কোরআন এবং ৯৫৪টি খতমে তাহলীল আদায় করেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কাগতিয়া দরবার থেকে পূর্বেই ঘোষণা হয়েছিল ওরছে কারোর কাছ থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, টাকা-পয়সা, নজর-নেওয়াজ ইত্যাদি নেওয়া হবে না, চলবে না শরীয়ত পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপ, শুধু কোরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণে পালিত হবে এ মহা মনীষীর সালানা ওরছ।
অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে সবার মুখে শুধু উচ্চারিত হয় সুমধুর সুরে কুরআন তিলাওয়াত, তাহলিল ও নিম্নস্বরে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ জিকির এবং নবী (দ.)’র শানে দরুদ পাঠ। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, প্রশান্তিময় পরিবেশ। শুধু দেশের নয়, সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশে আসা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মধ্যপ্রাচ্য, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাগতিয়া দরবারের শতশত অনুসারী এতে অংশ নেয়। জোহরের পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে এ কার্যক্রম। বিদেশে অবস্থানরত এ মনীষীর অনুসারীরাও বাদ পড়েননি, তারাও এদিন স্বস্ব স্থানে বসে আর নারীরা নিজেদের ঘরে বসে কুরআন তিলাওয়াত করেন।
সালানা ওরছে যোগদানের উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, আনোয়ারা পটিয়া ছাড়াও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী থেকে গাড়িযোগে কাগতিয়া দরবারের অসংখ্য অনুসারী, ভক্ত ও সাধারণ মুসলমানেরা সালানা ওরছে আসতে থাকে। চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, বি.বাড়িয়া, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকেও কাগতিয়া দরবারের হাজার হাজার অনুসারী ও মুসলমানেরা উপস্থিত হন। সালানা ওরছে যোগদানের জন্য শুধু দেশের নয়, বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সৌদিআরবসহ ওমান, কাতার, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ্ হতেও কাগতিয়া দরবারের অনুসারী সপ্তাহখানেক পূর্ব থেকে বাংলাদেশে আসেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলোকসজ্জিত করা হয় । মাগরিবের আগেই গাউছুল আজম কমপ্লেক্সের বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।
এসএসএইচ