নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির কিছু থাকে তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেখবে। দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করবে বলেও মনে করেন এই কমিশনার।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যদি হলফনামায় ভুল তথ্য দিয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) নির্বাচিত হয়ে থাকেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যদি কিছু থাকে তাহলে দুদক দেখবে। তারা মামলা করবে।

মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন। সোবহান মিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এই তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।

মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আবদুস সোবহান গোলাপের হলফনামায় তথ্য গোপন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসি মো. আলমগীর বলেন, ‘হলফনামা আমাদের একটা জমা দেবে। কিন্তু সেই হলফনামার সত্য-অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কোনো কিছু করার আইনি ভিত্তি নেই। হলফনামা যেটা দেবে সেটা এক ধরনের জাতিকে তথ্য জানানোর দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিমূলক কিছু যদি থাকে দুদক দেখবে। তারা মামলা করবে। রাজস্ব কোর্টে এনবিআর মামলা করতে পারবে। পরে আইনে যেটা আছে সেই আইন অনুযায়ী হবে। উনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ওনার ভোটারদের জানিয়েছেন ওনার নাম কি, শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে। কি সম্পদ আছে। আমাদের এখানে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেই।’

দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ ভোটে অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘দুই দেশের নাগরিকরা পারবেন না। তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা দেখবে। তারা আমাদের বললে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

প্রার্থী ভুল তথ্য দিলে প্রার্থী কোয়ালিফাইড হবে না জানিয়ে মো. আলমগীর বলেন, ‘এখন উনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। উনি ভুল তথ্য দিয়েছেন— এটা বললে হবে না, প্রমাণ করাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ব্যবস্থা নেওয়ার পর যখন পাঠাবেন তখন ব্যবস্থা নেব।’

কমিশনের সীমাবদ্ধতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা না। উনি হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে নমিনেশন সাবমিটের আগে জানালে ব্যবস্থা নেব।’ হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের আগে দিলে দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য মানেই প্রতারণা। প্রতারণার মামলা আছে আলাদা৷ কোর্ট শাস্তি দিয়ে আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘খসড়া দেওয়া হলো। প্রতি বছর মার্চ মাসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করি। এবারও তাই হবে। যদি কারো কোনো আপত্তি থাকে। তারা আপত্তি দেবেন। যদি ত্রুটি থাকে তাহলে সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন। পরে আমরা চূড়ান্ত করে ভোটার দিবসে প্রকাশ করব।’

ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়া অপরাধ জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘অনেক কঠিন শাস্তি। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হবে। ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা যাবে পাশাপাশি জেল খাটতে হবে।’

২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকা ভিত্তি ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে একটা সময় থাকে। সেই সময়ের মধ্যে ভোটার হলে তারাও অন্তর্ভুক্ত হবে।’

এসআর/এসএসএইচ/