চার অপারেটরের কাছে পাওনা আড়াই হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। রোববার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। দেশের তিন মোবাইল অপারেটরের বিভিন্ন ফি ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পরিশোধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিটিআরসি।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি জানায়, ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জ বাবদ গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির পাওনার পরিমাণ ১১৬৩.৮৫ কোটি টাকা, বাংলালিংকের কাছে পাওনা ৬২৫.২৭ কোটি, রবির কাছে পাওনা ৫৬৫.৫৮ কোটি ও এয়ারটেলের কাছে পাওনা ৫৯.০৫ কোটি টাকা।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের অর্থ মানে সাধারণ মানুষের টাকা, সে টাকা অবশ্যই অপারেটরদের দিতে হবে। বিটিআরসি জনগণের অর্থ আদায়ে বদ্ধপরিকর। 

বিটিআরসি যত আইন-কানুন ও পলিসি প্রণয়ন করেছে তা দেশের জনসাধারণের কল্যাণের জন্য করেছে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিটিআরসি এ দেশে টেলিযোগাযোগ খাতকে একটি সময়োপযোগী খাত হিসেবে তুলে ধরতে চায়। সেবার মানোন্নয়নে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন। তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির পাওনা বাবদ প্রকৃত টাকা প্রদান না করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আকারে অন্তর্ভুক্ত করে (যেমন— ১০০ টাকা মূল টাকা হলে বিটিআরসিকে দিয়েছিল ৮৫ টাকা অর্থাৎ বাকি ১৫ টাকা ভ্যাট হিসেবে প্রদর্শন করেছিল) প্রদান করেছিল।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের কাছ থেকে প্রাপ্য আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না মানলে আইনিভাবে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিটিআরসি।

স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব এবং জনগণের অর্থ। অপারেটরদের এই অর্থ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।

অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী বলেন, বিটিআরসি সরকারের কোষাগারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়ে আসছে। রাজস্ব যাতে সঠিকভাবে আদায় করা যায়, সেজন্য রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার বাস্তবায়নের পাশাপাশি রেভিনিউ পলিসি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, অপারেটরদের বিনিয়োগ এবং কস্ট ম্যানেজমেন্টের বিষয়গুলো তাদের নিজস্ব বিষয়। অপারেটরদের লাভ-ক্ষতির বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয় এবং বিটিআরসির প্রাপ্য তাদের পরিশোধ করতে হবে। 

বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, অপারেটরদের কাছে অন্যায়ভাবে কোনো অর্থ দাবি করা হয়নি এবং বিটিআরসি তার প্রাপ্য অর্থ পাবে।

ভ্যাট প্রদানে রিবেট সুবিধা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রিবেট পাওয়ার জন্য যেসব বিষয় দরকার তা এখানে বিদ্যমান নেই।

এআর/এসএসএইচ/