চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিনের করা নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী সৈয়দ মো. মুনতাকিম ওরফে মোস্তাকিম।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে মোস্তাকিম স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রটি পাঠানো হয়। একই আবেদনপত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার বরাবরও পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন পুলিশি নির্যাতনের শিকার মোস্তাকিম। তিনি বলেন, আমি আমার মাকে বাঁচাতে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমি কোনো সন্ত্রাসী বা গুন্ডা নই। অথচ পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন আমাকে বিনা কারণে ঘটনাস্থলেও মেরেছে, পরে থানায় নিয়েও মেরেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে। এতে আমার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বিচার দিয়েছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী তার বিচার করবেন।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উনি আবেদন করুক। আমি কী করব? এ ক্ষেত্রে আমার তো করার কিছু নেই।

জানা গেছে, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চলতি মাসের শুরুতে চমেক হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনরা আন্দোলনে নামেন। কয়েকদিন ধরে চলা এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও করেন এবং তাদের পরে দেখে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।

গ্রেপ্তার মোস্তাকিমও ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর ওসি নাজিম মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে চমেকের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর এপিকের সামনে থেকে আরও একজনকে ধরে ভেতরে নিয়ে যান ওসি। পাশাপাশি অন্য পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

একপর্যায়ে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মোস্তাকিম আন্দোলনে থাকলেও তার মা তখনও চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন। হাসপাতালে থাকতে তিনি শুনতে পান তার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কান্না করতে করতে তিনি হাসপাতাল থেকে সরাসরি পাঁচলাইশ থানায় চলে যান। সেখানে গিয়ে অনেক অনুরোধ করেও তিনি ছেলেকে ছাড়াতে পারেননি।

এরপর সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তকিমকে। অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকেও আসামি করা হয়। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে চমেকে সংঘর্ষের ঘটনায় ওসি নাজিম উদ্দিনের দায় অঅছে কি না তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিএমপি। গত ১৪ জানুয়ারি তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

এমআর/এসএসএইচ/