নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ভোলার নর্থ-২ গ্যাসকূপ /ছবি : সংগৃহীত

দেশের জ্বালানি সংকটের এই সময়ে ভালো আশা দেখাচ্ছে ভোলার নর্থ-২ গ্যাসকূপ। বাপেক্স কর্তৃক খননকৃত এই গ্যাসকূপ থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস মিলবে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৪৬টি কূপ খননের যে প্রকল্প নিয়েছি, ভোলা নর্থ-২ তারই অংশ। এখান থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দুই-এক দিনের মধ্যে সঠিক তথ্য জানতে পারব। জাতীয় গ্রিডে এই গ্যাস যুক্ত করার বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।’

২০২০ সালে বাপেক্সের একটি অনুসন্ধান দল ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ করে ভোলা নর্থ-২ কূপে গ্যাস থাকার সম্ভাবনার কথা জানায়। তখন একই গ্যাসক্ষেত্রের ইলিশা-১ কূপেও গ্যাস পাওয়ার কথা জানানো হয়। গ্যাস উত্তোলনে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করে বাপেক্স।

চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের ১৯ আগস্ট টবগী-১ কূপ খননের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে গ্যাজপ্রম। ১৯ নভেম্বর টবগী-১ কূপ থেকে ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

ভোলা নর্থ-২ কূপে খনন কাজ শুরু করা হয় গত ৫ ডিসেম্বর। দেড় মাসের মধ্যেই সেখানে গ্যাস পাওয়ার খবর দিল বাপেক্স।

দেশে বর্তমানে ২২টি গ্যাসক্ষেত্রের মোট ৪৩টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ রয়েছে প্রায় এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস। এই গ্যাসক্ষেত্রের চারটি কূপ থেকে প্রতিদিন গড়ে উত্তোলন করা হচ্ছে ৪৫-৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এখানকার গ্যাস বর্তমানে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি কারখানা ও আবাসিক পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বাপেক্সকে অভিনন্দন জানিয়ে সোমবার রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুসারে চালাতে হবে। অফশোর ও অনশোরে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে ২০২২-২৫ সময়কালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনেইসহ গ্যাস ও তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বর্তমানে ২২টি গ্যাসক্ষেত্রের মোট ৪৩টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ রয়েছে প্রায় এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস। এই গ্যাসক্ষেত্রের চারটি কূপ থেকে প্রতিদিন গড়ে উত্তোলন করা হচ্ছে ৪৫-৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

এখানকার গ্যাস বর্তমানে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি কারখানা ও আবাসিক পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া শাহবাজপুর ইস্ট কূপে ৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট এবং ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করছে বাপেক্স।

অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে অন্যান্য সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা গেলে জ্বালানি সংকট অনেকটাই কমে যাবে বলে মত তাদের।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ভোলা নর্থ-২ কূপে গ্যাস প্রাপ্তি খুবই ভালো সংবাদ। যদিও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিমাণে খুব বেশি নয়। অনুসন্ধানের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। ছোট আকারের যদি আরও ১০ থেকে ২০টি কূপ অনুসন্ধান করা যায়, তাহলে তা সামগ্রিকভাবে ভালো প্রভাব ফেলবে। আমাদের দেশে গ্যাসের এখনো যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করি। গ্যাসপ্রাপ্তি বাড়লে এলএনজি আমদানির পরিমাণ যেমন কমবে তেমনি জ্বালানি সংকট অনেকাংশেই কেটে যাবে।

ওএফএ/ওএফ/জেএস