রাজধানী ঢাকার ফুটপাতে সারাবছরই কমবেশি পিঠার দোকান দেখা যায়। বাঙালির সঙ্গে পিঠার ঐতিহ্য এতই জড়িয়ে যে বিভিন্ন ধরনের পিঠা নিয়ে শহরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অনেক স্থায়ী দোকানও। তবে শীতের এ মৌসুমটাতে ফুটপাতে পিঠার দোকানের সংখ্যা বেড়ে যায়। ক্রেতা টানতে ফুটপাতের এসব পিঠার দোকানে থাকে হরেক রকমের ভর্তার পসরা। নির্দিষ্ট কয়েকটি ভর্তার আইটেমের বাইরে অনেক দোকানেই থাকে বাড়তি ভর্তার আয়োজন। যার একটি নমুনা দেখা গেল আইজুলের দোকানে।

মিরপুরের পল্লবীর সাড়ে ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সেতারা টাওয়ারের উল্টোদিকে স্বপ্ন আউটলেটের সামনে ভ্যানের উপর এ দোকান সাজিয়েছেন ৪২ বছর বয়সী আইজুল। তাকে সাহায্য করছেন স্ত্রী। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত (ক্রেতা উপস্থিতির উপর) খোলা থাকে তার দোকান। প্রতি পিস পিঠার দাম ১০ টাকা। চিতই পিঠার পাশাপাশি রয়েছে ভাপা পিঠাও।

তার দোকানে সরিষা ভর্তা, বাদাম ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা, মটরশিম ভর্তা, শিম ভর্তা, ডাল ভর্তা, বেগুন ভর্তা, লইট্যা ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, চেঁপা শুটকি ভর্তা, রুই ভর্তা, রসুন ভর্তা, ধনিয়া ভর্তা, তিল ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, টমেটো ভর্তাসহ ২১ রকমের ভর্তায় পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন ভোক্তারা। তবে এসব ভর্তার মধ্যে ব্যতিক্রম দেখা গেল ইলিশ ভর্তার।

মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা আইজুল জানান, এসব ভর্তা তার স্ত্রী নিজ হাতে বেটে তৈরি করেন। ব্লেন্ডারে কোনো ভর্তা তৈরি করা হয় না। তবে কিছু কিছু ভর্তার তৈরির পদ্ধতি ভিন্ন।

এ প্রসঙ্গে পাশে থাকা তাইজুলের স্ত্রী বলেন, যেমন ইলিশ ভর্তা তৈরির জন্য প্রথমে মাছ কেটে সিদ্ধ করা হয়। এরপর হাত দিয়ে কাটা ছাড়িয়ে মেখে নেওয়া হয়। পরে পিঁয়াজ, রসুন দিয়ে তেলে ভেজে তৈরি করা হয় ইলিশ ভর্তা। রুই ভর্তা তৈরির পদ্ধতিও একই বলে জানান তিনি।

গত দুই বছর ধরে এ স্থানেই দোকান সাজান জানিয়ে তাইজুল বলেন, শীত কমে যাওয়ায় পিঠা বিক্রি কমেছে। এখন দিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪শ পিঠা বিক্রি হয় (দুই ধরনের)। শীত যখন বেশি ছিল তখন ৬শ পিঠাও বিক্রি হয়েছে। 

তিন মাস পিঠার ব্যবসা করেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি সময় রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স ১৫ বছর। ছেলের বয়স ১৩ বছর। আর ছোট মেয়ের বয়স ৭ বছর। 

পিঠা খেতে খেতে আইজুলের দোকানে প্রায় ২০ মিনিট সময় পার করতে করতে ক্রেতার বেশ চাপ দেখা যায়। কারণ পিঠা সাজিয়ে রাখার জন্য কাঁচের যে বক্স তৈরি করা আছে তাতে কোনো পিঠাই ঠান্ডা হওয়ার সময় পাচ্ছে না। আর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে যারা গরম গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন তাদের স্টিলের প্লেটের উপর একটি কাগজ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তা পরিবেশন করা হচ্ছে। হাত পরিষ্কার করার জন্য টিস্যুরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জেডএস