মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

অভিযোগে তিনি বলেন, আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং অন্য দেশে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় এ তথ্য গোপন করেছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। 

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ের ১২টার দিকে দুদকে অভিযোগ পত্র জমা দেওয়ার পর ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, মাদারীপুরের সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, যার বিষয়ে আমি একটা ভিডিও করেছি। ‌‘অরগানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের একটি প্রজেক্ট। যেখানে বলা হয়েছে, আব্দুস সোবহান গোলাপ নিউইয়র্কে ৯টা প্রপার্টিজ করেছেন। যেগুলো তার নিজের নামে আছে এবং এখন পর্যন্ত তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেননি।

সুমন বলেন, এমপি গোলাপ শপথ নেওয়ার ৭ মাস পর আমেরিকান সিটিজেনশিপ ত্যাগ করেছেন। অথচ আমাদের কনস্টিটিউশনে (সংবিধানে) আছে, আপনার যদি বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে কোনোভাবেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে পারবেন না। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট বলেছে, বিষয়টি দুদক দেখবে।

তিনি বলেন, আমি এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম দুদক এরকম একটি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার বিষয়ে কোনো সরাসরি সুয়োমুটো গ্রহণ করে কি না। যেহেতু এখন পর্যন্ত দুদক গ্রহণ করেনি, তাই আমি নিজে আজ দুদক বরাবর অভিযোগ করে গেলাম। এটা আইনে আছে, যেকোনো ব্যক্তি দুদকে অভিযোগ করতে পারবেন। দুদক এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয় বা না নেয় তার ওপর ভিত্তি করে আমি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি এবং ধারণকারী হিসেবে বলতে পারি, যে লোকটা অসৎ হবে সে কখনো দেশপ্রেমিক হবে না। আর যে লোকটা দেশপ্রেমিক হবে না সে দেশের জন্য বিশ্বস্ত না। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিশ্বস্ত না হওয়ায় তিনি শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এগুলো যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে এরকম লোকের গণভবনে থাকা অথবা জননেত্রী শেখ হাসিনার আশপাশে থাকা তার সিকিউরিটির (নিরাপত্তা) জন্য হুমকি। এর জন্য যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করার, আমি করব।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, দুদক থেকে সবসময় বলা হয়, যেই হোক না কেন দুদক যদি প্রয়োজনীয় উপাত্ত পায় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি গোলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক দেরি করে, তাহলে সেটা তাদের বক্তব্যের সঙ্গে মিলবে না। দুদক যদি এ বিষয়ে দেরি করে তাহলে আমরা বিশ্বাস করব, দুদক শুধু একটা লেভেল পর্যন্ত যায়, যে লেভেলের ওপরে গোলাপ সাহেবরা থাকেন। গোলাপ সাহেবদের লেভেল পর্যন্ত দুদক পৌঁছাতে পারে না, এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, গোলাপ সাহেবের ৯টা সম্পত্তি শুধু নিউইয়র্কে পাওয়া গেছে। কত সম্পত্তি যে বাংলাদেশে আছে সেটির হিসাব তো আর আমি নিতে পারব না। এই লোকটা যদি এসব সম্পত্তি এমপি থাকাকালীন সময়ে করে থাকেন, তাহলে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের নাম ব্যবহার করে যে টাকাটা তিনি কামাই করেছেন অবৈধভাবে, এটা আপনি নিশ্চিত থাকুন নিপীড়িত আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী যারা, তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। কাউকে পৌরসভার চেয়ারম্যান বানাবে, কাউকে এমপি বানাবে— এসব জায়গা থেকে টাকা নিয়েছেন।

সুমন বলেন, এত দীর্ঘ সময় পরও কী কারণে মানুষ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে কষ্ট পায়? কারণ, কিছু লোক টাকা বানিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু লোক ওই যে বলেন, ‘মজা মারে ফজা ভাই, আর আমরা শুধু বৈঠা বাই’। কর্মীরা শুধু বৈঠা মারে, আর মজা পায় ওই গোলাপের মতো ফজা ভাইরা। বঙ্গবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে এ ধরনের লোক সংসদে থাকলে। তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দুদককে তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে হবে। এরকম সঠিক তথ্য পেয়েও যদি তদন্ত না করে, তাহলে তাদের ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা আসবে। এজন্য আমি আজ অভিযোগ দিয়ে গেলাম, পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এমএইচএন/ওএফ