পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

ভারতের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তিস্তা চুক্তি তো ১০ বছর আগেই সই হয়ে গেছে, বাস্তবায়ন হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে কি না- জানতে চাইলে শনিবার (১৩ মার্চ) এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হলো তিস্তা চুক্তি হবে কি না। তিস্তা চুক্তি তো ১০ বছর আগেই সই হয়ে গেছে, বাস্তবায়ন হয়নি। তিস্তা চুক্তি ১০ বছর আগে পাতায় পাতায় সই হয়েছে। মোটামুটি অ্যাগ্রিমেন্ট উভয় পক্ষ...ভারত সরকারও আমাদের বারবার বলছেন আগে যে চুক্তিটি হয়েছে, তারা এটা গ্রহণ করে এবং তার থেকে তাদের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। কী কারণে যে এটি বাস্তবায়ন হয়নি, সেটাও তারা আমাদের জানিয়েছেন। আপনি-আমি-আমরা সবাই জানি।’

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেই ২০১১ সালে। সে সময়ের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে চুক্তি সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে আটকে যায়। সেই মমতাই এখনও বাধা হয়ে আছেন। তাকে বাগে আনতে পারেননি মোদি।

তিস্তার জট খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরকে ঘিরে। ওই বছরের ৭ থেকে ১০ এপ্রিলের সফরে ৩৫টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। তবে সেখানে তিস্তার প্রসঙ্গ ছিল না। ওই সফরের দ্বিতীয় দিন ৮ এপ্রিল শেখ হাসিনা সরকার এই চুক্তি করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

২০১৮ সালের মার্চে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভারত সফরেও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেসময় আবদুল হামিদকে মোদি জানান, এ বিষয়ে মমতাকে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে। একই বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরকে ঘিরেও তিস্তার প্রসঙ্গ সামনে আসে। যদিও এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল অন্য। তারপরও মোদির সঙ্গে তার এক ঘণ্টার একান্ত বৈঠক এবং পরে মমতার সঙ্গে আধা ঘণ্টার আলাপনে তিস্তা নিয়ে নাটকীয় কোনো ঘোষণা আসেনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ দশ দিন জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দিতে ২৬ মার্চ দুই দিনের সফরে ঢাকা আসার কথা রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।

সফর প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মূলত আসছেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। কিন্তু বিষয়টিকে হেডলাইনস করেছে মোদির সফরে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হবে না। আবার টিভিতে দেখলাম বাকি অংশ দিয়েছে।’

মোমেন বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র, তার নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসছেন, এটাই তো আনন্দের বিষয়। উৎসবের বিষয়। তার এই সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।’

‘দুই প্রধানমন্ত্রী যখন আলোচনা করবেন তখন অবশ্যই যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং যে বিষয়গুলো ঠিক হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যাতে অসুবিধা না হয়, তা হয়তো তিনি তুলে ধরতে পারেন। ইস্যুগুলো তো আমরা সবাই জানি। তারা কত দূর করতে পারবে সেগুলো আমরা জানি, তারাও জানে।’

এনআই/ওএফ