কোরবানি ছাড়াই এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগে ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী হোটেল ভিক্টোরিতে বেসরকারি ব‍্যবস্থাপনায় হজ ২০২৩ ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত  হোসাইন তসলিম। 

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব ফারুক আহমদ সরকার এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াকুব শরাফতীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন>> সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা

হাব সভাপতি জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজ পালন করবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৬৮ জন।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য ১টি প্যাকেজ করা হয়েছে। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এছাড়া প্রত্যেক এজেন্সি হজযাত্রীদের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন প্যাকেজ করতে পারবেন।

এর আগে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সচিবালয়ে হজ প্যাকেজ-২০২৩ বিষয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই হিসাবে সরকারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে ১০ হাজার ৪০৩ টাকা কমিয়ে হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে হাব।

আরো পড়ুন >> হজের খরচ কমলো ৩০ শতাংশ

এক প্রশ্নের জবাবে এম শাহাদাত  হোসাইন তসলিম বলেন, এবার বিমার ভাড়া বৃদ্ধি ও বিমানের কনভারশন রেট কমাতে না পারায় এবার হজের প্যাকেজ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব হজযাত্রী ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করছেন। তারা ভেবেছেন ৪ লাখ কিংবা সাড়ে ৪ লাখ টাকায় হজে যেতে পারবেন। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে হজে যেতে হচ্ছে। আমরা বিমান ভাড়া যৌক্তিক করার দাবি জানাচ্ছি।

এই বছর সবাই হজে যেত পারবেন উল্লেখ্য করে হাব সভাপতি বলেন, এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরা হজে যেতে পারবেন। আগামী ২১ মে থেকে হাজিরা পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে।

তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, ঘোষিত প্যাকেজের হজযাত্রীদের পবিত্র হারাম শরিফের বাইরের চত্বরের সীমানার সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ মিটার দূরত্বে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। 

সরকারি ব্যবস্থায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আবাসন রয়েছে বলে জানান তিনি।

হাজিদের উদ্দেশ্যে শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজযাত্রীদের হজ প্যাকেজের পুরো অর্থ শুধু সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সরাসরি এজেন্সিতে জমা দিয়ে মানি রিসিট সংরক্ষণ করবেন। কোনোক্রমেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কোনো প্রকার লেনদেন করবেন না। হজযাত্রীরা হজ প্যাকেজের পুরো অর্থ আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে অবশ্যই নিজ নিজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে জমা করে বা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ করবেন।

হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করার সময় হজযাত্রীকে প্রাক-নিবন্ধনে ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম নিবন্ধনের নম্বর হুবহু লিপিবদ্ধ করতে হবে। সৌদি ভিসা লজমেন্টে জটিলতা দূর করার জন্য পূর্ণাঙ্গ নামে পাসপোর্ট করতে হবে। পাসপোর্টের তথ্যপাতা স্ট্যাপলার পিন দিয়ে গাঁথা যাবে না বা অন্য কোনোভাবে ছিদ্র করা যাবে না।

প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকার সনদ লাগবে বলে জানানো হয়।

হজ যাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো এয়ারলাইন্স এ বছর ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছাড়া সিডিউল ফ্লাইটে কোনো হজযাত্রী বহন করতে পারবে না। প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি সরকার অতিরিক্ত কোনো ফি আরোপ করলে তা প্যাকেজের মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে।

আরও পড়ুন>>যে কারণে বেড়েছে হজের খরচ

এর আগে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় সরকারিভাবে একটি হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

সরকারিভাবে গত বছর দুটি থাকলেও এবার ঘোষিত একটি প্যাকেজ অনুযায়ী, হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হবে।

গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছিল।

এমআই/এমএ