সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় পৌঁ‌ছে‌ছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছা‌লে তা‌কে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকা‌লে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের স‌ঙ্গে বৈঠক কর‌বেন। বৈঠ‌কে তারা শ্রমবাজার জটিলতা নিরস‌নে আলোচনা কর‌বেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বল‌ছে, বৈঠ‌কে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।

আরও পড়ুন : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ‘গতিশীল’ করতে নতুন প্রস্তাব দেবে ঢাকা

সকা‌লে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেনা কল্যাণ সংস্থার সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন। শেষ কর্মসূচিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী। রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এ সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালে কর্মী পাঠানো নিয়ে আমরা চুক্তি করলেও বাজারটি কিছুটা অচল অবস্থার মধ্যে চলছে। প্রত্যাশিত পর্যায়ে শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে না। শ্রমিক যেতে পারছে না। অথচ মালয়েশিয়ার শ্রমিক চাহিদা অনেক বেশি। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমরাও হচ্ছি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, বাজার নিয়ে যেসব জটিলতা আছে, সেগুলো দূর করা হবে। আমাদের শ্রমিকদের যাওয়ার পথ সুগম হবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির শ্রমবাজার প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর দিচ্ছেন। দেশটির শ্রমবাজার প্রক্রিয়ায় হওয়া অনিয়ম দূর করে ঢেলে সাজানোর ধারাবাহিকতায় দেশে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তেমনি কর্মী সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা চায় দেশটি। তারই ধারাবাহিকতায় নেপাল এবং বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিনকে।

১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায় । তিন বছর শ্রমবাজারটি বন্ধ থাকার পর ঢাকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দেশটিতে নতুন করে কর্মী পাঠাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ।  

কিন্তু কর্মী পাঠানো শুরুর আগেই নতুন শর্ত আসে কুয়ালামপুরের পক্ষ থেকে। তৎকালীন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভারান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে এক চিঠি দিয়ে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের বার্তা দেয়। ঢাকা এ শর্ত মেনে নিতে রাজি না হওয়ার পাশাপাশি ফিরতি বার্তায় নিবন্ধিত এক হাজারের বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে।

রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে শুরু হওয়া নাটকীয়তা বন্ধে গত বছরের জুনের (২০২২) শুরুর দিকে তৎকালীন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীকে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী। তার দুই মাস পর ২০২২ সালে হওয়া চুক্তির পর ৯ আগস্ট মালয়েশিয়ায় ৫৩ কর্মী দিয়ে যাত্রা শুরু হয়।

এনআই/এসকেডি