জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সব ধরনের তামাকবিরোধী তৎপরতায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিএমএ ভবনের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান সভাকক্ষে ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন : তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে অগ্রগতি ও পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। যৌথভাবে এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।

ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর—এটি প্রায় সবাই জানেন। তারপরও মানুষ এটা ব্যবহার করছে। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে তামাকবিরোধী প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে তামাকবিরোধী প্রচারণা পৌঁছে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য বিএমএ কাজ করছে। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তামাকবিরোধী কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে বিএমএ। আগের মতো সামনের দিনেও বিএমএ ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ যৌথভাবে তামাকের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে কাজ করবে। 

বিএমএ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তারেক মেহেদী (পারভেজ) বলেন, সাধারণত বিএমএ চিকিৎসকদের নিয়ে কাজ করলেও জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই তামাকের ভয়াবহতা থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিএমএ।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড রিসার্চের বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যান্সার, বক্ষব্যাধি এবং অন্যান্য অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আওয়াল রিজভী বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। এটি করতে অবশ্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ তামাকবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। এবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিদ্যমান আইনের ছয়টি দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।

দাবিগুলো হলো—পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

এতে সভাপতিত্ব করেন বিএমএর ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। সঞ্চালনা করেন দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহা. শেখ শহীদ উল্লাহ।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএমএর কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডা. মো. জামাল উদ্দিন খলিফা, ডা. এএইচ এম জহুরুল হক, ডা. মো. আবু রায়হান, ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামানসহ বিএমএর ইসি কমিটির সদস্যরা। 

টিআই/কেএ