ছাদ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ৪২ বছর বয়সী শাজাহান আলম। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল)।

মারাত্মক আহত অবস্থায় শাজাহান আলমকে নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে আসেন তারই ভাই রফিকুল ইসলাম। জরুরি বিভাগে এসে পড়েন বিড়ম্বনায়। অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। এরপর ভর্তি নেয় হাসপাতালটি। শুরু হয় অব্যবস্থাপনার জ্বালা। প্রথমেই ট্রলি নিয়ে রোগীকে পৌঁছে দেওয়ায় গুনতে হয় বকশিশ। পদে পদে বকশিশ দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। 

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তির পর রোগীর স্থান হয় তৃতীয় তলার প্যারা ওয়ার্ডের (পুরুষ) জি- ১৯ নম্বর বেডে। সম্প্রতি মেরুদণ্ডে অপারেশন হয়। সোমবার (১৫ মার্চ) তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা।

এখানে ২২ দিন থাকার অভিজ্ঞতার কথা ঢাকা পোস্টকে জানান রফিকুল ইসলাম। বলেন, প্রায় সবারই ব্যবহার ভালো, শুধু দু-একজন ওয়ার্ড বয়, নার্স ছাড়া। তারা শুধু টাকা চায়। অমানবিক আচরণ করে। এখানে ভালো থাকতে পারেন না রোগী এবং তাদের স্বজনরা। সবাই তাদের কাছে অসহায়।

‘আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন পুরুষ নার্স আছেন, যিনি সবার হোতা। কোনো রোগীর ড্রেসিং করলে তিনি টাকা চান। জোর করে টাকা দিতে বাধ্য করেন রোগীর স্বজনদের। অপারেশনের পর বেল্ট বা আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তার কাছ থেকেই কিনতে হবে— এমন পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছেন। বাইরের চেয়ে তার কাছে পাওয়া জিনিসের দামও বেশি। কেউ যদি বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসেন তার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেন। রোগীর সেবা দিতে চান না। যেভাবে ড্রেসিং করার নিয়ম সেভাবে করেন না। রোগীকে উল্টো কষ্ট দেন। এমন আচরণ আপনি অন্য কোথাও পাবেন না।’

প্যারা ওয়ার্ডের (পুরুষ) ১০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন কানু মোল্লা। সড়ক দুর্ঘটনায় হাতে ও কোমরে আঘাত পেয়ে এখানে ভর্তি হন। ১৬ দিন পর আজ (সোমবার) তিনি ছুটি পাচ্ছেন। তার সঙ্গে এতদিন এখানে ছিলেন ছেলে রোমান মোল্লা।

তিনি বলেন, ‘দোহার থেকে ১৬ দিন আগে এখানে আব্বাকে ভর্তি করাই। সেবা পেতে হলে সবাইকে টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া কোনো কাজ তারা করে না। অসহায় অবস্থায় এতদিন থেকেছি। আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন আছেন, রোগীর আনুষঙ্গিক সব জিনিসপত্র তার কাছতে কিনতে বাধ্য করেন।’

‘ড্রেসিং করালে, ট্রলি ব্যবহার করলে টাকা দিতে হয়। কোনো কাজই টাকা ছাড়া হয় না। রাজ্জাক নামের ওই পুরুষ নার্সের কাছ থেকে বেল্ট না কেনায় আমার সঙ্গে, আমার আব্বুর সঙ্গে খুবই দুর্ব্যবহার করেন। হাত মচকে দেন, গালমন্দ করেন। সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। রোগী নিয়ে যারাই আসেন, খুবই অসহায়ত্বের মধ্যে থাকতে হয়। সবাই মুখ বুজে সহ্য করেন, আর সব ক্ষেত্রে টাকা দিতে বাধ্য হন।’

রোগীর স্বজনদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলতে তাকে ওয়ার্ডে খোঁজা হয়। কিন্তু পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স জানান, তাকে খোঁজা হচ্ছে জেনে সে অন্য ফ্লোরে চলে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গণি মোল্লার রুমের সামনে অপেক্ষা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরে তার সহকারী মোহাম্মদ কালাম জানান, তিনি এখনও অফিসে আসেননি। এছাড়া হাসপাতালের উপ-পরিচালক অসুস্থ থাকায় ছুটিতে আছেন বলে জানা যায়।

এএসএস/এমএআর/