তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নিজের ভাষা বাদ দিয়ে অন্য ভাষা শেখা আধুনিকতা নয়। বিশ্বায়নের এ যুগে অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু তা নিজের ভাষায় পরিপক্বতার পরই। 

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগে ঢাকা ক্লাবের প্রধান লাউঞ্জে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ উপলক্ষে ক্লাব কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ‘বাংলা আমার প্রাণ’ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে চলেছি। কিন্তু ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে আমরা বাঙালিরা আগে থেকেই অনেক সমৃদ্ধ। এসময় তিনি ইউরোপের বাইরে সাহিত্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গাছের প্রাণ আবিষ্কর্তা বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমুখ বিশ্বখ্যাত বাঙালিদের উদাহরণ তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সব শহীদ সদস্য, জাতীয় চারনেতা, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাছান মাহমুদ বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পরই আমাদের পূর্বসূরিরা অনুধাবন করেছিলেন যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালিদের মুক্তি নিহিত নেই। সেই কারণেই ১৯৪৮ সালের ১২ আগস্ট অর্থাৎ পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রথম বছরপূর্তি ১৪ আগস্টের দুই দিন আগে তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিব একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেই বিবৃতি তৎকালীন ইত্তেহাদ ও অন্যান্য পত্রিকায় ছাপাসহ লিফলেট আকারেও প্রচার হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন- ১৪ আগস্ট আনন্দ-উল্লাসের দিন নয়। অত্যাচার-নিপীড়নের নাগপাশ থেকে মুক্তি পাওয়ার শপথ নেওয়ার দিন হিসেবে ১৪ আগস্ট পালনের আহ্বান জানান তিনি। 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, তরুণ নেতা শেখ মুজিব অনুধাবন করেছিলেন যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র তার সংখ্যাগুরু বাঙালিদের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না, কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে অবদমিত করে রাখতে চায় যে, কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১০ জনের মন্ত্রিসভায় বাঙালি ছিল মাত্র একজন, ফজলুর রহমান সাহেব যিনি আমাদের সালমান এফ রহমান ভাইয়ের বাবা, অথচ বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগুরু এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিল্প-সংস্কৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে অনেক উন্নত; সেখানে বাঙালির মুক্তি নেই।

মন্ত্রী বলেন, সেই অনুধাবন থেকেই কায়দে আযম জিন্নাহর একতরফা উর্দু রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানান বঙ্গবন্ধু এবং আরও কয়েকজন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে যে পথ বেয়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ আমাদের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাধিকার আন্দোলনের এ সূচনার পর দুই দশকের সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম। স্মরণ করি, কানাডা প্রবাসী আরেক সালাম ও রফিকের উদ্যোগ ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চূড়ান্ত তৎপরতায় জাতিসংঘে আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত।

আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। 

ওএফএ/এফকে