সব জেলা ও হাইওয়েতে ট্রাকশ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার করা, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী বন্ধ থাকা গাড়ির রুট পারমিটের সমস্যা সমাধান এবং চালকদের ডোপ টেস্টের ফি ৯০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (২৩ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এসব দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা প্রমুখ।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে সড়ক পরিবহন খাত অনেক অবদান রেখে চলছে। এ সেক্টরের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা এখন নানা সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওই আইন সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটি আইন সংশোধনের জন্য কিছু যৌক্তিক সুপারিশ পেশ করেছিল। কিন্তু প্রায় বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত আইনের উক্ত সংশোধনী পাস হয়নি। এ নিয়ে মালিক-শ্রমিকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমতাবস্থায়, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর প্রস্তাবিত সংশোধনী অবিলম্বে পাস করা দরকার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সব জেলা ও হাইওয়েতে ট্রাকশ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও সব সুযোগ সুবিধাসহ ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এখনো হয়নি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, যেসব জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নেই সেসব জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা দরকার। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চালক, শ্রমিক এবং পথচারিদের সচেতন করতে ২২ অক্টোবর একদিনের পরিবর্তে তিন দিন সড়ক নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা করা আবশ্যক। এতে সড়ক নিরাপদ রাখার ব্যাপারে সবাই উদ্বুদ্ধ হবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে চালকদের ডোপ টেস্ট সেন্টার দেশের সব জেলায় নেই। ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা না থাকায় চালকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া ডোপ টেস্টের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ৯০০ টাকা একজন চালকের পক্ষে প্রদান করা কষ্টসাধ্য। তা কমিয়ে ৫০০ টাকা করা প্রয়োজন। সড়ক পরিবহনে সৃষ্ট সমস্যা দূর করার জন্য বিআরটিএ'র সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে দেশে দক্ষ চালক তৈরির জন্য বিআরটিএ’র নিয়ন্ত্রণে প্রতি জেলায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন।

সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ এ মোটরযানের পরিষেবার বিভিন্ন ফি নতুন করে প্রায় কয়েকশ গুণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া গাড়ির টায়ার-টিউব ও খুচরা যন্ত্রাংশের মূল্য প্রায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে গাড়ির পরিচালন ব্যয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ এ আরোপিত মোটরযানের পরিষেবা ফি সংশোধন করা আবশ্যক।

১৯৮৪ সালে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী এলাকায় তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছিল উল্লেখ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা ১০০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব টার্মিনালে গাড়ি পার্কিং স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ফলে টার্মিনালের আশপাশের রাস্তা থেকেই বিভিন্ন পরিবহনের গাড়ি চলাচল করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভায় বাস টার্মিনালের নির্ধারিত স্থানের বাইরে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ঢাকা শহরে রাখা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মালিকরা ব্যবসায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমতাবস্থায়, ঢাকার বাইরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ না করা পর্যন্ত ঢাকা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো কাউন্টার সরানো যাবে না। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সুপারিশে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী সব গাড়ির রুট পারমিট প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়রকে নির্দেশ প্রদান করা প্রয়োজন।

এমআই/এমজে