পৌনে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফেঁসেছেন সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী জেসমিন সুলতানা।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ১৯৯৫ সালে পদোন্নতি পাওয়া পুলিশ পরিদর্শক মুন্সি মোফাজ্জল হোসেনের নিজ ও স্ত্রীর নামে সাভারে ৯ তলা ও ৪তলা দুটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নগদ টাকা। স্ত্রী বাস্তব জীবনে গৃহিণী হলেও তোফাজ্জেল হোসেন স্ত্রীকে ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ইতোমধ্যে পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আলতাফ হোসেনের সুপারিশে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিগগিরই দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন বলে জানা গেছে। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানকালে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রীকে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হলে হাজির না হয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠান তারা।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ১৯৮৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর উপ পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। তার প্রথম স্ত্রী রিতা বেগমের সঙ্গে ২০০৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তিনি দ্বিতীয়বার ২০০৬ সালে জেসমিন সুলতানাকে বিয়ে করেন। প্রথম সংসারে তার জুলফিকার রিগ্যান এবং মেয়ে রেন্সি জাহান নামে দুই সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সংসারেও তিন সন্তান। তার বর্তমান স্ত্রী একজন গৃহিণী। 

নিজ ও তার স্ত্রী জেসমিন সুলতানার নামে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার দিয়াখালীর ১০.৫০ শতাংশ জমির ওপর (জেবা ম্যানশন নামীয় পাঁচ ইউনিট) ৯তলা বাড়ি এবং আশুলিয়ায় ৪তলা বাড়িসহ ৮.২৫ শতাংশ জমি। যার বিপরীতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে ওই বাড়ি দুটি নির্মাণ করেছেন। ওই বাড়ি নির্মাণের সময় তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে ৮৭ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। অথচ তার স্ত্রীর আয়ের কোনও বৈধ উৎস বা ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। 

অনুসন্ধানকালে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেনের নামে ৫ কোটি ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৬ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তার নামে প্রাপ্ত অস্থাবর সম্পদ তিনি উপহার হিসেবে প্রাপ্ত হয়েছেন বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন তাদের যৌথ নামের দুটি বাড়ি নির্মাণের পর ২০২১-২২ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন। যেখানে অতীত জীবনের সঞ্চয় ১ কোটি ৩২ লাখ ২৮ হাজার ১৮৪ টাকা, ব্যাংক ঋণ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ফ্ল্যাট বন্ধক ৬০ লাখ টাকাসহ ৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৫৭ আয়ের উৎস প্রদর্শন করেছেন। এর মধ্যে ফ্ল্যাট বন্ধকের ৬০ লাখ টাকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অর্থ্যাৎ মোট ৩ কোটি ৭৮ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৫ টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৪১ হাজার ১৭১ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যা দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

অন্যদিকে অনুসন্ধানকালে জেসমিন সুলতানার নামে ২ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৭৯ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি  ২৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্যসহ মোট ৩ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৭৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে ঋণ, সঞ্চয় ও বাড়িভাড়াসহ ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬ টাকার আয়ের উৎস পাওয়া যায়। তবে ১ কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৫ টাকা বাদে অন্য কোনও আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জেসমিন সুলতানা একজন গৃহিনী। তার নামে কোনও ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তার আয়ের কোনও বৈধ উৎসও নেই। স্বামী মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ওসি হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারাই সম্পদ অর্জিত হয়েছে।

যে কারণে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

আরএম/এসএম