সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মো. মামুন উদ্দিন/ সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মামুন উদ্দিনকে। মামলায় তার আরো দুই ভাই ও কারখানার বিভিন্ন স্তরের ১৩ কর্মকর্তাসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তবে সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে প্রশাসন ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মামুন উদ্দিন। সেখানে তিনি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

'চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্পপ্রবণ এলাকায় দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন' শীর্ষক জরুরি সভায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সভায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মো. মামুন উদ্দিন। তার বক্তব্যে উঠে আসে অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিচালনায় যে পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ার বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দরকার তার কিছুই ছিল না চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিকো অক্সিজেন লিমিটেডে। দুজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা একজন সুপারভাইজার প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে তার বাবা আহমদ শফী কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে এটি পরিচালনা করা হয়। এখানে শিল্পকারখানায় ব্যবহারের অক্সিজেন প্রস্তুত করা হয়। দুর্ঘটনার সময় শ্রমিক-কর্মকর্তা মিলে ১৯ জন কর্মরত ছিলেন। তবে এর পাশাপাশি অনেক পথচারী আহত হয়। 

শনিবারের ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারখানার অপারেটররা ডিপ্লোমাহোল্ডার। ওনাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। ২৭ বছর ধরে তারা কারখানাটি চালাচ্ছেন। সেদিনের দুর্ঘটনায় কারো হাত নেই। কেন হয়েছে জানি না। আল্লাহ ভালো জানেন।

সভায় চট্টগ্রামের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের প্রধান আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত বলেন, বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টও পরিদর্শন করা হয়। তখন এই প্ল্যান্টে বেশ কিছু সমস্যা পাওয়া যায়। পরে মৌখিকভাবে এবং চিঠি দিয়ে তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন তারা কয়েকমাসের সময় নেয়। কিছু সমস্যার সমাধান করে। একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান অটো রি-রোলিং কারখানায়ও বেশ কিছু সমস্যা পাওয়া যায়। সমস্যা থাকার কারণে পরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তর বাদী হয়ে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় সোমবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিন ছাড়া অপর আসামিরা হলেন- পরিচালক পারভেজ হোসেন, আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি, ম্যানেজার আব্দুল আলীম, প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার, প্ল্যান্ট অপারেটর খুরশিদ আলম, সেলিম জাহান, নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অ্যাডমিন অফিসার গোলাম কিবরিয়া, অফিসার শান্তনু রায়, সামিউল, সুপারভাইজার ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল ও রাজীব।

মামলার বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্তব্য কাজে অবহেলা ও কারখানা কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ১৬ জন আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ। 

মামলার এজাহারে বাদী রোকেয়া বেগম উল্লেখ করেন- তার স্বামী ১০-১৫ দিন আগে ফোনে একবার বলেছিলেন, 'কারখানায় অর্থের অভাবে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। বর্তমানে যারা কাজ করছে তারা অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ। আল্লাহই জানেন, কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে যায়।' একথা শুনে তারা খুব চিন্তিত ছিলেন। এর মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত কারণে কারখানার অক্সিজেন কলামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে বাদী তার স্বামীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান। সেখানে তার স্বামী কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। 

এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন- কারখানা মালিক ও আসামি হওয়া কর্মকর্তারা যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা বিপজ্জনকভাবে গ্যাস উৎপাদন, ভর্তি ও সরবরাহ করতেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার মতো প্রশিক্ষিত জনবল রাখেননি। এতে করে বিস্ফোরণে তার স্বামীসহ সাতজন মারা যান।

জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল কেশবপুর এলাকার প্রায় এক একর জায়গায় সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামে কারখানাটি অবস্থিত। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারখানাটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এমআর/জেডএস