১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনতাই
ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই, হাতে ছিল না অস্ত্রও
রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থানাধীন ১১ নম্বর সড়কে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছিল। তবে তাদের হাতে ছিল না কোনও আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা দেশীয় ধারালো অস্ত্র।
ছিনতাইয়ের এ ঘটনাকে পুলিশ ও ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেলে সাড়ে ৫টায় তুরাগ থানায় উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০ সিরিয়ালের একটা নোয়া গাড়িতে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে বের হয়ে রওনা দেয় সাভার ইপিজেডের উদ্দেশে।
কোম্পানির ভাষ্য মতে, গাড়িটিতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। গাড়িটি মিরপুর ডিওএইচএস পার হয়ে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে ১১ নম্বর ব্রিজ হয়ে যখন সামনের দিকে যাচ্ছিল, তখন পেছন থেকে একটি কালো কালারের মাইক্রোবাস এসে ডান থেকে বামে চাপ দিয়ে হর্ন দেয় ও গাড়িটির গতিরোধ করে।
বিজ্ঞাপন
প্রথমে তারা হর্ন দেওয়া নিয়ে কোম্পানির গাড়ির চালকের সঙ্গে ঝগড়া করে। এরপর গাড়ির চালক এবং কোম্পানির সুপারভাইজরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। ছিনতাইকারী দলের একজন ওই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে। তিনি গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড় করায়। ওই সময় গাড়িটিতে কোম্পানির একজন ম্যানেজার ছিলেন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এবং গাড়িতে থাকা টাকার চারটি ট্রাংক নামায়, কালো রংয়ের আরেকটি হায়েস গাড়িতে করে তারা সেই বাক্স নিয়ে চলে যায়।
তারা গাড়িটি রাজউকের ভবনের পাশ দিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের রাস্তা হয়ে সামনে থেকে ইউটার্ন করে ১০ নং সড়ক হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ছিনতাইয়ের এই ঘটনা মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের লোকজন ৯৯৯ এ কল করে বিস্তারিত জানায়। ৯৯৯ এর মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়। ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পেয়ে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসেন, এরপর ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। কোম্পানির ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
জানা যায়, ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি, মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ছিনতাইকারীদের হাতে অস্ত্র ছিল কি না এবং তারা কোনও পরিচয় দিয়েছিল কি না জানতে চাইলে ডিসি মোর্শেদ বলেন, ছিনতাই করতে আসা গাড়িটিতে ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা আমাদের জানিয়েছেন। তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ছিনতাইকারীরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছে।
হঠাৎ করে ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটেনি, এটা পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে ডিসি মোর্শেদ বলেন, এতগুলো টাকা এদিক দিয়ে যাবে ছিনতাইকারীরা তা জানবে কী করে? নিশ্চয়ই পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। কারণ দিনের বেলায় ঢাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির এতো বড় ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি নেই। যা ঘটে ছোটখাটো, মধ্যরাতে ঘটে। সকাল বেলায় এ ধরনের ছিনতাই নিশ্চয়ই পূর্বপরিকল্পিত, আমরা ঘটনাটি বিস্তারিত তদন্ত করে দেখবো। প্রতিষ্ঠানটির কোনো সদস্য এ ঘটনায় জড়িত কি না সেটাও আমরা খতিয়ে দেখবো। আমরা সব কিছু বিবেচনায় তদন্ত করছি।
এখন পর্যন্ত কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বা কাউকে আটক করা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে বেশি মোর্শেদ বলেন, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ওই গাড়িটিতে ঘটনার সময় পাঁচজন ছিলেন, তাদের আমরা থানায় নিয়ে এসেছি। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনেছি। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া টাকার গাড়িটিও থানায় আনা হয়েছে।
টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশকে জানানোর জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বারবার অনুরোধ করা হয়। অথচ এতোগুলা টাকা সকালবেলা এমন নির্জন স্থান দিয়ে সাভার নেওয়া হচ্ছিল! পুলিশকে জানানো হয়েছিল কি না, পুলিশের নিরাপত্তা নজরদারির ঘাটতি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, না তারা আগে থেকে পুলিশকে কিছু জানায়নি, ৫/১০ লাখের বেশি হলে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশকে জানানোর নিয়ম। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এখানে পুলিশের কোনো অবহেলা দেখার সুযোগ নাই।
ডিসি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি এরকম টাকা স্থানান্তর করেন, বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা বুথে স্থানান্তর করেন তাদের আরএ সতর্ক হওয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কেউ টাকা স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে বা ট্রিপল নাইনে ফোন করে অভিযোগ করলে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি, পুলিশ বা থানা পুলিশ সবসময় প্রস্তুত।
তুরাগ থানা কম্পাউন্ডে কথা হয় মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রা. লি. এর পরিচালক অজয় করের সঙ্গে। তিনি বলেন, টাকা বহনকারী আমাদের গাড়িটি সাভার ইপিজেড যাওয়ার জন্য মিরপুর ডিওএইচএস অফিস থেকে বের হয়ে দিয়াবাড়ী পার হওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। তারা প্রথমে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া শুরু করে। পরে মারধর শুরু করে। তারা ১২/১৩ জন ছিলেন। এরপর গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চালিয়ে সামনে নেয়। এরপর টাকার ট্রাংক নিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, ছিনতাই হওয়া টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আমাদের টাকাগুলো বহন করে সাভারে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। আমরা এখন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবো।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার জানান, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ছিনতাইয়ের শিকার গাড়িতে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে বিবরণ শোনা হচ্ছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় ছিনতাই হওয়া টাকা একটা বড় অংশ উদ্ধার হয়েছে বলে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে ডিবির পক্ষ থেকে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
জেইউ/এসএম