যোগফলের অভিনব কৌশলে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ২ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার ৯৮২ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন নরসিংদী সদরের বরখাস্তকৃত সাব-রেজিস্ট্রার নীহার রঞ্জন বিশ্বাস। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (১৩ মার্চ) দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকারি ফি বইয়ে উৎসে কর বাবদ আদায়কৃত অর্থের প্রকৃত যোগফল কম দেখিয়ে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ২ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার ৯৮২ টাকা আত্মসাৎ করেন বরখাস্ত হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার নীহার রঞ্জন। এ পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকা পোস্টে ‘যোগ-বিয়োগের কারসাজিতে কোটি কোটি টাকা লোপাট!’- শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধানে নামে দুদক। তবে মামলা দায়ের করা হলেও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নকলনবিশ শফিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়নি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনকালে উৎসে কর, স্থানীয় সরকার কর, রেজিস্ট্রেশন ফি ও  স্ট্যাম্প ডিউটি ফি বাবদ সরকারি রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। আদায় করা অর্থ বা পে-অর্ডার দিনভিত্তিক পৃথক রেজিস্ট্রার মোতাবেক লিপিবদ্ধ করা হয়। তবে প্রকৃত আদায় করা পে-অর্ডারগুলোর অর্থ ব্যাংকে পরিমাণে কম জমা দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। 

এতে দেখা যায় দিনশেষে ফি বইয়ে প্রদত্ত যোগফল প্রকৃত যোগফল অপেক্ষা কম। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ফি বইয়ে কৌশলে যোগফল কম দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃত আদায়ের যোগফল অপেক্ষা কৌশলে যোগফল কম দেখিয়ে ১১ মাসে ২ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার ৯৮২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

নরসিংদী সদর সেই সময়ের সাব-রেজিস্ট্রার নীহার রঞ্জন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দলিল নিবন্ধন সম্পাদনকালে ২০০১ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত স্ট্যাম্প ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্থানীয় কর, উৎসে কর খাতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ অভিযান পরিচালনা করে দুদকের একটি দল। দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম ও উপ-সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগের সমন্বয়ে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিল।

আরএম/কেএ